You are currently viewing সুপার ফুড ‘সজিনা পাতা’ – জেনে নিন সজিনা পাতার অত্যাশ্চর্য সব উপকারিতা
সজিনা পাতার উপকারিতা

সুপার ফুড ‘সজিনা পাতা’ – জেনে নিন সজিনা পাতার অত্যাশ্চর্য সব উপকারিতা

ভালোবাসা ছড়িয়ে দিন

বাংলার গ্রামে-গঞ্জে সজিনা (সজনে) পাতা বা সজিনা (সজনে) গাছ একটি অতি পরিচিত সবজির নাম। গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই আদরে-অনাদরে বেড়ে ওঠে এই অতিপরিচিত গাছ। কিন্তু, আমরা অনেকেই জানি না সজিনা গাছ তথা সজিনা পাতার অত্যাশ্চর্য সব উপকারিতার কথা। সজিনা পাতার উপকারিতা সম্বন্ধেই আজকের আলোচনা।

সজিনা বা সজনে গাছের বিজ্ঞানসম্মত নাম হল মরিঙ্গা অলিফেরা (Moringa oleifera)। সজিনা পাতার বিভিন্ন উপকারিতার কথা চিন্তা করে পুষ্টিবিজ্ঞানীরা সজিনা পাতার গুঁড়োকে “নিউট্রিশন্স সুপার ফুড” নামে অভিহিত করেছেন এবং সজিনা গাছকে “অত্যাশ্চর্য বৃক্ষ” বা মিরাক্কেল ট্রি বলে থাকেন। অনেকে আবার একধাপ এগিয়ে এই গাছকে পুষ্টির ডিনামাইট হিসাবে উল্লেখ করেন। তবে সজিনা গাছের ফুল বা ফলের (ডাঁটা) থেকে এর পাতার পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতা অনেকটাই বেশি। সজিনা পাতাকে তাই পুষ্টির আধার নামেও উল্লেখ করা হয়ে থাকে। সুদূর দক্ষিণ আফ্রিকায় এই গাছকে মায়েদের উত্তম বন্ধু হিসাবে মানা হয়। সজনে বা সজিনা পাতা কাঁচা অবস্থায় রান্না করে বা শুকনো করার পর গুঁড়ো করে পাউডার হিসাবে খাওয়া যেতে পারে।

‘সুপার ফুড’ সজিনা পাতার উপকারিতা

সজিনা পাতার উপকারিতা :

আসুন, এই অতিপরিচিত সজিনা পাতা বা সজনে পাতার কিছু গুণাগুণের কথা সংক্ষেপে জেনে নিই –

১) মাল্টিভিটামিন গুণ সমৃদ্ধ সজিনা পাতাকে নিরামিষভোজীদের জন্য উৎকৃষ্ট খাদ্য হিসেবে গণ্য করা হয়। আমাদের দেহের প্রায় ২০ শতাংশ হল প্রোটিন যা বিভিন্ন অ্যামাইনো অ্যাসিড নিয়ে গঠিত। মানবদেহের জন্য আবশ্যিক অ্যামাইনো অ্যাসিডের প্রায় সব ক’টিই এই সজিনা পাতায় পাওয়া যায়।

২) সজিনা পাতার পুষ্টিমূল্যের তুলনামূলক আলোচনা করলে দেখা যায়, একটি কমলালেবুতে যে পরিমান ভিটামিন-সি থাকে, সম ওজনের সজিনা পাতায় তার প্রায় সাত গুণ পরিমান ভিটামিন-সি থাকে। আবার, সম ওজনের সজিনা পাতায় সম ওজনের দুধের তুলনায় চার গুণ বেশি ক্যালসিয়াম থাকে, সম ওজনের গাজরের তুলনায় চার গুণ বেশি ভিটামিন-এ (ক্যারোটিন) থাকে এবং সম ওজনের কলার তুলনায় তিন গুণ বেশি পটাশিয়াম থাকে।

আরও পড়ুন –


৩) পুষ্টিবিজ্ঞানীরা গবেষনা করে দেখেছেন যে, একটি গর্ভবতী মা বা সদ্য মা হওয়া মহিলার জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম ও আয়রনের সবটুকু সরবরাহ করতে দৈনিক মাত্র ছয় টেবিল চামচ সজিনা পাতার গুঁড়ো আবশ্যক।


৪) কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই সজিনা পাতা মায়ের বুকের দুধের পরিমান বাড়াতে সাহায্য করে। সন্তান প্রসবের পরে, অল্প লবন জলে সিদ্ধ করা সজনে পাতা গাওয়া-ঘি দিয়ে মেখে খেলে, মায়ের বুকের দুধ বাড়তে সাহায্য করে।


৫) সজিনা পাতায় প্রচুর পরিমানে আয়রন ও জিঙ্ক থাকে। তাই রক্তাল্পতা বা আমিনিয়ার চিকিৎসার পথ্য হিসাবে সজিনা পাতা গ্রহণ করা বিশেষ কার্যকরী।


৬) সজিনা পাতায় ক্যালশিয়ামের প্রাচুর্যের কারণে এটি হাড় এবং দাঁতের গঠন ও ক্ষয়রোধ করতে বিশেষ উপযোগী।


৭) দেখা গেছে, সজিনা পাতাকে বেটে তার রস নিয়মিত সেবন করলে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে। তাছাড়া আলসার এবং হেপাটাইটিস রোগের চিকিৎসাতেও সজিনা পাতার নির্যাস বিশেষ কার্যকরী।


৮) আয়ুর্বেদিক মতে, ১ চামচ সজিনা পাতার রস এবং ২ চামচ কুমড়োর রস একসঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে খেলে মূত্র ও মূত্রথলির সমস্যায় বিশেষ লাভজনক হয়।


৯) প্রচন্ড মাথাব্যথা হলে, সজিনা পাতা বেটে তার সঙ্গে গোলমরিচ গুঁড়ো মিশিয়ে কপালে লাগালে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।


১০) হুপিং কাশির নিরাময়েও সজিনা পাতা বিশেষ কার্যকরী। এক চামচ সজিনা পাতার রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে নিয়মিত খেলে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।


১১) পেটের বিভিন্ন জটিলতায় সজিনা পাতা বিশেষ উপযোগী ভূমিকা পালন করে। মধু মেশানো এক চামচ টাটকা সজনে পাতার রস এক গ্লাস নারকেলের জলে নিয়ে ২-৩ বার খেলে কলেরা, আমাশা, ডায়োরিয়া, কোলাইটিস ও জন্ডিসে অনেক উপকার পাওয়া যায়।


১২) প্রচুর পরিমানে আন্টি-অক্সিডেন্ট থাকায়, শুধু রোগ-নিরাময়ে নয়, রূপ-চর্চাতেও সজিনা পাতার উপযোগিতা আছে। সজিনা পাতার টাটকা রসের সঙ্গে পাতিলেবুর রস মিশিয়ে সেই মিশ্রণটি ত্বকে লাগালে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। ব্রণ, মুখের কালো ছোপ দূর করে এই রস ত্বককে ঝকঝকে করে তুলতে সক্ষম।

১৩) পোকার কামড়ে এন্টিসেপটিক হিসাবে এবং ক্ষতস্থান সারানোর জন্য সজিনা পাতার পেস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।


১৪) ভিটামিন-এ অধিক পরিমাণে থাকায় চোখের দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখতে এবং চোখের সুরক্ষায় নিয়মিত সজিনা পাতা খাওয়া বেশ উপযোগী। বিশেষ করে রাত্রে দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখতে এই পাতা অবশ্যই খাওয়া যেতে পারে।

তাহলে আর দেরি কেন, আদরে-অনাদরে বেড়ে ওঠা সজিনা গাছের পাতা আজ থেকেই খাওয়া শুরু করুন।

সুস্থ থাকুন, আনন্দে থাকুন। যে কোন প্রকার জিজ্ঞাস্য বা পরামর্শ থাকলে নির্দ্বিধায় কমেন্ট বক্সে জানান। আপনার মতামত আমাদের কাছে আদরণীয়।


ভালোবাসা ছড়িয়ে দিন

This Post Has 10 Comments

  1. Mahfujur Rahman

    আমার ঔষধ না খেলে পেসার কমে না। কোন ঔষধি গাছ আছে যা পেসার নিয়ন্ত্রণে আসবে দয়া করে একটু জানাবেন।

  2. প্রাণতোষ সরকার

    কাচা সজনে পাতা জলে সিদ্দ করে সেই জল পান করলে কি উপকার পাওয়া যাবে।

    1. হ্যাঁ, উপকার পাওয়া যাবে। সিদ্ধ করার আগে সজনে পাতাগুলি ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নেবেন।

  3. শফিকুলইসলাম গাজী

    কিডনিতে পাথর হলে সজিনা পাতা উপকারে আসে কিনা?

  4. পাখীর হোসেন

    শুনেছি সজিনা গাছের ছালের রস পান করলে নাকি খুব দ্রুত সেক্স উত্তেজনার সৃষ্টি হয় । কথাটি ঠিক না ভুল ?

  5. মো রকিবুজ্জামান

    কাচা সজনে পাতা ভেলেন্ডারে রস করে খেলে কি কি উপকারিতা আছে।এতো কোন পার্শপ্রতিক্রিয়া আছে কি? একটু জানালে উপক্রিত হতাম।

  6. Papiya dasmondal

    বাহহ সজনে পাতাও এতো ভালো কাজ করে?
    আমরা তো বেশির ভাগ সজনে ডাটা আর ফুল টা খাবার হিসাবে গ্রহন করি,, এতো benificial জানা ছিলো না,, এখন জেনে গেলাম ☺

মন্তব্য করুন