শিশু জন্মের ঠিক পরমুহূর্তে মায়ের স্তনে প্রথম হলুদাভ আঠালো যে দুধ উৎপন্ন হয়, তাকে শালদুধ বা কলোস্ট্রাম (Colostrum) বলে। শিশু জন্মের পর প্রথম দু-তিন দিন এই শালদুধ ক্ষরিত হয়। পুষ্টিগুণে ভরপুর শালদুধের উপকারিতা অনেক। সেইজন্য অনেকে একে শিশুর জন্য ‘তরল সোনা‘ নামে আখ্যায়িত করে থাকেন।
কিন্তু দুঃখের বিষয়, অনেকেই এই কলোস্ট্রাম বা শালদুধের উপকারিতা সম্পর্কে জানেন না। শিশুকে মায়ের বুকের প্রথম দুধ পান করানো সম্পর্কে সচেতন নন। উল্টে নানান কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে অনেকক্ষেত্রে শিশুকে শালদুধ থেকে বঞ্চিত করা হয়। কিন্তু শিশুর বেড়ে ওঠা, শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য শালদুধের উপকারিতা অনেক।
আরও পড়ুন : (১) গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস : সমস্যা, ঝুঁকি, সমাধান (২) মায়ের বুকের দুধ বা মাতৃদুগ্ধের উপকারিতা (৩) মাসিকের ব্যথা কমানোর জন্য কী করণীয়?
কলোস্ট্রাম বা শালদুধের উপকারিতা
- কলোস্ট্রাম বা শালদুধ অ্যান্টিবডিতে ভরপুর, যা শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে। শিশুর প্রথম ভ্যাক্সিনেশন হল এই শালদুধ পান। অপত্য শিশুর মা ইতিমধ্যে যে সমস্ত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, সেই সমস্ত রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে কলোস্ট্রাম বা শালদুধের ভূমিকা অপরিসীম।
- শালদুধে আছে উচ্চমাত্রার প্রোটিন, স্বল্প মাত্রায় ফ্যাট এবং অন্যান্য অনেক প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ। শালদুধ সহজপাচ্য হওয়ায় শিশু সহজেই তা হজম করতে পারে।
- কলোস্ট্রাম বা শালদুধে secretory immunoglobulin A (sIgA) নামের একটি অ্যান্টিবডি প্রচুর পরিমাণে থাকে। পরিপাকনালীতে মিউকাস স্তর তৈরির মাধ্যমে শিশুর রক্তপ্রবাহে রোগজীবাণুর প্রবেশ রোধ করে। এই sIgA অ্যান্টিবডিটি বিভিন্ন অন্ত্র ও শ্বাসতন্ত্রের রোগ প্রতিরোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে থাকে।
- কলোস্ট্রাম বা শালদুধ শিশুর অন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়ার জন্ম দিতে সাহায্য করে।
- শিশুর পুষ্টি যোগানের পাশাপাশি শিশুর মল বা পায়খানা তৈরি হওয়ার ক্ষেত্রেও শালদুধের ভূমিকা আছে। রেচন পদার্থগুলি শিশুর শরীর থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য শিশুর জন্ডিস হওয়ার সম্ভবনা কমে। অর্থাৎ, শালদুধ শিশুর জন্ডিস প্রতিরোধে সাহায্য করে।
- ক্যারোটিনয়েড ও ভিটামিন A এর পর্যাপ্ত উপস্থিতির জন্য শালদুধ হলুদ রঙের হয়। এবং এই জন্যই শালদুধ শিশুর দৃষ্টিশক্তি গঠনের জন্যও বিশেষ উপকারি। তাছাড়া ভিটামিন A এর উপস্থিতির কারণে, শিশুর ত্বকের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে শালদুধ উপকারি।
- শালদুধ বিভিন্ন খনিজ প্রয়োজনীয় উপাদানেও ভরপুর। যেমন শালদুধে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেশিয়াম ও ক্যালশিয়াম থাকে যা শিশুর হৃৎপিন্ড ও হাড়ের গঠনে বিশেষ উপকারি। সাধারণ মাতৃদুগ্ধের তুলনায় শালদুধে প্রায় চার গুণ জিঙ্ক থাকে। এই জিঙ্ক শিশুর মস্তিষ্কের গঠনে খুবই উপযোগী। তাই শিশুর মানসিক ও বৌদ্ধিক বিকাশের জন্য শালদুধের উপকারিতা অনেক।
Pingback: মাতৃদুগ্ধের উপকারিতা : মায়ের বুকের দুধ-ই শিশুর জন্য সর্বোত্তম
Pingback: মাসিকের ব্যথা বা ডিসমেনোরিয়া (Dysmenorrhoea) কমানোর জন্য কী করণীয়?