মাসিকের ব্যথা খুবই কষ্টকর। মাসিকের অসহ্য ব্যথায় কাতরাতে থাকেন, এমন মহিলার সংখ্যা কম নয়। মাসিকের ব্যথার ইংরেজি হল ডিসমেনোরিয়া (Dysmenorrhoea)। গ্রীক শব্দাংশ ‘ডিস’ (dys-) ও ‘মেনোরিয়া’ (menorrhœa) যুক্ত হয়ে এই শব্দের তৈরি। ‘ডিস’ (dys-) কথাটির অর্থ ‘যন্ত্রণা বা ব্যথা বা কষ্ট’ এবং ‘মেনোরিয়া'(menorrhœa) কথাটির অর্থ ‘মাসিকের রক্তপ্রবাহ’। অর্থাৎ ‘ডিসমেনোরিয়া’ শব্দটির অর্থ “ব্যথাযুক্ত মাসিকের রক্তপ্রবাহ”। রক্তক্ষরণের থেকেও এই ব্যথা অনেককে অনেক বেশি কাবু করে দেয়।
Table of Contents
মাসিকের ব্যথা বা ডিসমেনোরিয়ার কারণ :
মাসিক রক্তপ্রবাহের সময়কালে তলপেটে ব্যথা অনুভূত হয়। এই ব্যথা কখনও কখনও কোমরের দিকেও হয়ে থাকে। সঙ্গে বমি বমি ভাব, মাথা ব্যথা, স্তনে ব্যথা, শারীরিক দুর্বলতা ইত্যাদি সমস্যাও থাকতে পারে।
বিশেষত কম বয়সী মেয়েদের পিরিয়ড শুরু হওয়ার সময়কালে এই সমস্যা বেশি হয়। তবে ডিসমেনোরিয়া প্রধানত দু’রকমের হয়। প্রাইমারি ডিসমেনোরিয়া ও সেকেন্ডারি ডিসমেনোরিয়া। প্রাইমারি ডিসমেনোরিয়ার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ থাকে না। এটি কম বয়সী মেয়েদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। পিরিয়ড বা মাসিকের সময় এই ব্যথা সাধারণত ৪৮ ঘন্টা থেকে ৭২ ঘন্টা থাকে। অন্যদিকে সেকেন্ডারি ডিসমেনোরিয়া একটু বেশি বয়সের মহিলাদের হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে সাধারণত নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায়। ওভারিয়ান সিস্ট (Ovarian cyst), এন্ডোমেট্রিওসিস (Endometriosis), ফাইব্রয়েড (Fibroid), প্রসব পথের সংক্রমণ ইত্যাদি কারণে সেকেন্ডারি ডিসমেনোরিয়া হয়ে থাকে।
রোগনির্ণয় :
সাধারণত প্রাইমারি ডিসমেনোরিয়া নির্ণয়ের জন্য কোনো পরীক্ষা করার দরকার পড়ে না। রোগ লক্ষণের ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসা করা হয়। চিকিৎসক খুব প্রয়োজনবোধ করলে কেবলমাত্র তখনই টেস্ট লিখে দেন।
অন্যদিকে সেকেন্ডারি ডিসমেনোরিয়া নির্ণয় করার জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়।
- Pelvic Examination
- Complete Blood Count
- Ultrasonography
- Pelvic Laparoscopy
- Vaginal Cytology ইত্যাদি।
এছাড়াও প্রয়োজনমাফিক অন্যান্য পরীক্ষার দরকার হতে পারে।
মাসিকের ব্যথা কমানোর জন্য কী করণীয়?
(১) মাসিকের ব্যথা কমানোর জন্য ওষুধ গ্রহণ
ব্যথা কমাতে NSAIDs জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। মেফেনামিক অ্যাসিড, আইবুপ্রোফেন, অ্যাসিক্লোফেনাক ইত্যাদি এই জাতীয় ওষুধ। এইসব ওষুধের সাথে প্যারাসিটামল, কম্বিনেশনে ব্যবহার করা যায়। খাবার পরে এই জাতীয় ওষুধ খেলে গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিড কমানোর ওষুধ খাওয়ার দরকার নেই। তবে পেপটিক আলসার থাকলে, এই জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করার আগে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যেকোনো ওষুধ গ্রহণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া বেশি ভালো।
(২) গরম জলের সেঁক মাসিকের ব্যথায় উপশম দেয়
মাসিকের যন্ত্রণায় তলপেটে গরম জলের সেঁক দেওয়ার প্রথা অনেক পুরনো। গরম জলের সেঁক দিলে ব্যথায় বেশ কিছুটা আরাম পাওয়া যায়। মাসিকের ব্যথার উপশম হয়। গরম জলের সেঁক দেওয়ার জন্য হট ওয়াটার ব্যাগ ব্যবহার করতে পারেন। তাছাড়া পিরিয়ডের সময় গরম জলে স্নান বিশেষ উপকারি।
(৩) মাসিকের ব্যথা কমাতে উপযোগী আদা
মাসিকের ব্যথা কমাতে আদা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। আদা ব্যথা উদ্রেককারী প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন কমাতে সাহায্য করে এবং মানসিক অবসাদ কমায়। কয়েক টুকরো আদা গরম জলে ফুটিয়ে সেই জল পান করুন। সেই জলে অল্প মধুও মিশিয়ে নিতে পারেন। তাছাড়া আদা-চা পান করলেও মাসিকের ব্যথার উপশম হয়।
(৪) মাসিকের ব্যথা উপশমে দারুচিনি বিশেষ উপকারি
মাসিকের ব্যথা উপশমে দারুচিনিরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এক টেবিল চামচ দারুচিনির গুঁড়ো চা-এর সঙ্গে মিশিয়ে ৫ মিনিট ফুটিয়ে খেতে হবে। পিরিয়ড শুরু হওয়ার দুই-তিন দিন আগে থেকে খেলে, মাসিকের ব্যথা অনেকাংশে দূর হয়ে যাবে। তাছাড়া দারুচিনি দেওয়া জল ফুটিয়ে, সেই জলে মধু দিয়েও পান করা যেতে পারে। দারুচিনি তেলও বাজারে পাওয়া যায়। এই তেল তলপেটে হালকা মালিশ করলেও ব্যথার উপশম হয়।
(৫) ল্যাভেন্ডার তেল ব্যবহার করলে মাসিকের ব্যথা কমে
পিরিয়ডের সময় তলপেটে কয়েক ফোঁটা ল্যাভেন্ডার তেল দিয়ে হালকা মালিশ করুন। এটি আপনার পেট ব্যথা অনেকটা কমিয়ে দেয়। ২০১২ সালের একটি স্টাডিতে দেখা গেছে, ল্যাভেন্ডার তেল ব্যবহারের ফলে মাসিকের পেটব্যথা ও অস্বস্তি অনেকটাই কমে।
আরও পড়ুন :
(১) পিরিয়ড বা মাসিক কী? কেন হয়? জেনে নিন খুঁটিনাটি সবকিছু।
(২) গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস? জেনে নিন কারণ, ঝুঁকি ও সমাধান।
(৩) শালদুধ বা কলোস্ট্রাম কী? বাচ্চার জন্য শালদুধ কতটা উপকারী?
(৪) বগলের কালো দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায়।
(৫) বিয়ের আগে কী কী মেডিকেল টেস্ট করা প্রয়োজন?
(৬) মাসিকের সময় পুষ্টিকর সুষম খাদ্যগ্রহণ করুন
সঠিক এবং সুষম পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণ মাসিকের ব্যথায় অনেক উপযোগী। তেল-ঝাল-লবণ কম দেওয়া সহজপাচ্য পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ প্রয়োজন। সেইসঙ্গে প্রদাহরোধী খাবার যেমন চেরি, বেরি, কুমড়ো, টমেটো খাদ্যতালিকায় যোগ করতে হবে। সেইসঙ্গে ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার ও ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত খাবার খেতে হবে। পেঁপে, নাসপাতি, কলা, পেয়ারা, আপেল এইসব ফল খান। এইরূপ খাদ্যগ্রহনে মাসিকের ব্যথা কমার সঙ্গে সঙ্গে সার্বিক স্বাস্থ্যেরও উন্নতি হবে। তবে শুধু মাসিকের কয়েকদিন নয়, সারাবছরই সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণ আবশ্যিক।
(৭) বেশ কিছু খাবার এড়িয়ে চলুন
মাসিকের সময় বেশ কিছু খাবার এড়িয়ে চলুন। বেশি ফ্যাটযুক্ত খাবার, অ্যালকোহল, প্যাকেটজাত লবনাক্ত খাবার, কোল্ড ড্রিংকস না খাওয়াই ভালো। এই সমস্ত খাবার গ্রহণ না করলে, মাসিকের ব্যথা বেশি হওয়ার সম্ভবনা থাকে। তাই এগুলি এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
(৮) মাসিকের সময় কফি পান করবেন না
মাসিকের সময় কফি পান থেকে বিরত থাকুন। কফির উপাদান ক্যাফেইন, রক্তনালিকা সংকুচিত করে দেয়। ফলে জরায়ুর মাংসপেশীতে রক্তসঞ্চালন হ্রাস পায় এবং ব্যথা তীব্রতর হয়। পরিবর্তে কম ক্যাফেইন যুক্ত আদা-চা, গ্রীণ টি, কার্ডামম্ টি, পিপারমিন্ট টি, লেমোনগ্রাস্ টি এই জাতীয় হার্বাল চা পান করতে পারেন।
(৯) মাসিকের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে যোগব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলুন
নিয়মিত যোগব্যায়াম ও শরীরচর্চা মাসিকের ব্যথা কমাতে। এই সমীক্ষায় দেখা গেছে, সপ্তাহে অন্তত তিনদিন ৩০ মিনিট করে যোগব্যায়াম বা হালকা এরোবিক এক্সারসাইজ করলে মাসিকের ব্যথা পূর্বের তুলনায় অনেক কম হয়। যোগব্যায়াম বা শরীরচর্চা করার সময় না পেলে, বাজার বা কাজের জায়গায় সাইকেল নিয়ে যেতে পারেন। লাঞ্চের পর অল্প হাঁটাহাঁটি করা যায়। তাছাড়া প্রিয় গানের তালে নাচতেও পারেন।
(১০) পর্যাপ্ত জল গ্রহণ
পিরিয়ড বা মাসিকের সময়ে শরীরে জলের চাহিদা বেড়ে যায়। জল কম পান করলে সমস্যা সাধারণত বাড়ে। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করুন। মাসিকের সময় পেট ফাঁপা অস্বস্তি সৃষ্টি করে। সঙ্গে পেট ব্যথা বাড়িয়ে দেয়। তাই পর্যাপ্ত জল পান করে এই সমস্যা সৃষ্টি হয় না। তাছাড়া মাসিকের ব্যথায় গরম জল পান করতে পারেন। গরম জল সারা শরীরে রক্তপ্রবাহ বাড়ায় ও পেশী শিথিল করে। ফলে জরায়ু সংকোচনজনিত ব্যথা কমে।
★ পেয়ারা খাওয়া উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ ★ আদা খাওয়ার উপকারিতা ★ কাঁচা লঙ্কা খাওয়ার উপকারিতা ★ কোল্ড ড্রিংকস খাওয়ার অপকারিতা
Pingback: শালদুধ বা কলোস্ট্রাম (colostrum) কী? শালদুধের উপকারিতা | শিশুর জন্য শালদুধের উপকারিতা - শরীর ও স্বাস্থ্য
Pingback: গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস? জানুন কারণ, ঝুঁকি ও কী করণীয়?
Pingback: মাতৃদুগ্ধের উপকারিতা : মায়ের বুকের দুধ-ই শিশুর জন্য সর্বোত্তম
Pingback: পিরিয়ড বা মাসিক কী? কেন হয়? জেনে নিন খুঁটিনাটি সবকিছু।
Pingback: মাথার চুল ঝরে পড়ার কারণ | মাথায় টাক পড়ার কারণ
Pingback: সাদাস্রাব হলে কী করবেন? | সাদাস্রাবের কারণ ও প্রতিকার
Pingback: পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা | পেয়ারার পুষ্টিগুণ ও পেয়ারার উপকারিতা
I was pretty pleased to discover this great site. I want to to thank you for ones time due to this fantastic read!! I definitely appreciated every part of it and I have you book marked to look at new stuff on your web site.