You are currently viewing মাথার চুল ঝরে পড়ার কারণ | মাথায় টাক পড়ার কারণ
মাথার চুল ঝরে পড়ার কারণ

মাথার চুল ঝরে পড়ার কারণ | মাথায় টাক পড়ার কারণ

ভালোবাসা ছড়িয়ে দিন

মাথার চুল ঝরে পড়ার কারণ বিভিন্ন হতে পারে। নারী পুরুষ নির্বিশেষে অনেকেই এই সমস্যায় ভুগছেন। মাথার চুল ঝরে টাক হয়ে গেছে, এমন মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। বাড়ি-ঘর মোছামুছি বা পরিষ্কারের সময়ই বোঝা যায় চুল ঝরার হার! সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে এই নিয়ে দুশ্চিন্তা।

সাধারণত দৈনিক বেশ কিছু পরিমান চুল এমনিই ঝরে যায়। সেই জায়গায় নতুন চুল গজায়। কিন্তু সমস্যা সৃষ্টি হয়, যখন ঝরে পড়া চুলের থেকে কম সংখ্যক নতুন চুল গজায়। টাক পড়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য, কী কী কারণে চুল ঝরে পড়ে সেগুলি জানা খুবই প্রয়োজন। সেই কারণগুলো নিয়েই নীচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল –

মাথার চুল ঝরে পড়ার কারণ :

১) বংশগত বা জিনগত কারণে চুল পড়তে পারে

চুল পড়ার সব থেকে বড়ো কারণ বংশগত বা জিনগত হতে পারে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাথার চুল পড়ে গিয়ে টাকের সৃষ্টি হয়। এটিকে অ্যান্ড্রোজেনিক অ্যালোপেশিয়া (androgenic alopecia) বলা হয়। পুরুষ-নারী উভয়ের মধ্যেই এই সমস্যা দেখা যায়। পুরুষদের ক্ষেত্রে সাধারণত মাথার সামনের দিকে ও মাঝে টাক সৃষ্টি হয়। মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রথমে মাঝের চুল উঠে পাতলা হতে শুরু করে এবং ক্রমে মাথার ধার বরাবর চুল উঠতে থাকে।

২) হরমোনজনিত কারণে চুল পড়ে

হরমোনজনিত কারণে অস্থায়ী বা স্থায়ীভাবে মাথার চুল পড়তে পারে। অ্যান্ড্রোজেনিক হরমোন বিশেষত ডাইহাইড্রোটেস্টোস্টেরন (Dihydrotestosterone সংক্ষেপে DHT) মহিলাদের চুল ঝরে পড়া ও ছেলেদের টাকের অন্যতম কারণ। এই হরমোন পুরুষদের শরীরে প্রধানত বেশি পরিমাণে থাকে। যাঁদের শরীরে এই হরমোনের প্রভাব বেশি, তাঁদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। নারীর মেনোপজের আগে ও পরে এই অ্যান্ড্রোজেনিক হরমোনের পরিমান বেড়ে যায়। তখন হঠাৎ করেই চুল ঝরে পড়ার সমস্যা বেশি দেখা যায়। তাছাড়া থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা কম বা বেশি হওয়াও চুল ঝরার একটি কারণ। গর্ভবতী অবস্থায় এবং বাচ্চার জন্মের পর হরমোনাল ভারসাম্য পরিবর্তিত হয় বলে, তখন চুল বেশি পড়ে। হরমোনের এই পরিবর্তন আবার আগের অবস্থায় ফিরে গেলে পুনরায় চুল গজায়। তবে তা আগের অবস্থায় যেতে এক বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

★ আরও পড়ুন :
(১) গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের কারণ, ঝুঁকি ও সমাধান।
(২) মাসিকের ব্যাথা বা ডিসমেনোরিয়া (Dysmenorrhea) কমানোর জন্য কী করণীয়?
(৩) নাক ডাকার কারণ ও সমাধান।

৩) ছত্রাক সংক্রমণের কারণে চুল ঝরে পড়ে

ছত্রাক সংক্রমণের কারণে মাথার চুল ঝরে পড়তে পারে। খুসকি, রিং ওয়ার্ম বা দাদ সৃষ্টি হওয়ার জন্য অনেক সময় মাথার ত্বক থেকে চুল উঠে যায়। মাথার চুল পাতলা হয়ে সাময়িক টাক সৃষ্টি হয়। চিকিৎসা করানোর পর সংক্রমণ দূর হলে পুনরায় চুল গজাতে শুরু করে।

৪) খাদ্যাভ্যাসের কারণেও চুল পড়ার সমস্যা হতে পারে

খাদ্যের মাধ্যমে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন, বায়োটিন, আয়রন, জিঙ্ক গ্রহণ না করলে চুল ঝরে পড়ার সমস্যা সৃষ্টি হয়। ক্রাশ ডায়েটিংয়ের ক্ষেত্রে এই সমস্যা সৃষ্টি হতে বেশি দেখা যায়। তবে পুনরায় পর্যাপ্ত প্রোটিন, আয়রন, জিঙ্ক প্রভৃতি গ্রহণ করে সমস্যা মিটে যায়। অন্যদিকে অত্যাধিক ভিটামিন-এ গ্রহণ করার ফলে চুল ঝরে পড়ার সমস্যা দেখা যায়। তাছাড়া প্রক্রিয়াজাত খাবার, ফাস্ট ফুড, কোল্ড ড্রিংকস, অত্যধিক শর্করা প্রভৃতি খাওয়ার ফলেও চুল ঝরে যাওয়ার সমস্যা দেখা যায়। তাই দৈনিক খাদ্যতালিকায় প্রোটিন, শর্করা, চর্বি, খনিজ ও ভিটামিন পরিমিত পরিমাণে থাকা প্রয়োজন।

৫) বেশ কিছু অসুখে চুল পড়ে

কিছু অসুখে যেমন – অ্যানিমিয়া, টাইফয়েড, জন্ডিস, ম্যালেরিয়া, ডায়াবেটিস, থাইরয়েডের সমস্যা ইত্যাদিতে চুল পড়ে যেতে পারে। অনেক সময় অসুখ ভালো হওয়ার পরও চুল আর আগের অবস্থায় ফিরে আসে না। তাছাড়া শরীরে বড় কোনো অস্ত্রোপচার বা অপারেশনের পর বিভিন্ন ওষুধ প্রয়োগ, শারীরিক পরিবর্তন অথবা মানসিক উদ্বেগের কারণে অনেক সময় চুল পড়ে যেতে পারে। তবে সুস্থ হওয়ার পর চার থেকে আট সপ্তাহের মধ্যে চুল আগের অবস্থায় ফিরে যায়।

৬) ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবেও চুল ঝরে যেতে পারে

বেশ কিছু ওষুধ গ্রহণের ফলে মাথার চুল ঝরে পড়ে যেতে পারে। ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্য এটি হয়। যেমন: জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ি, প্রেসারের ওষুধ, রক্ত তরলীকরণের ওষুধ, হরমোনজনিত সমস্যা ও মানসিক অসুস্থতার ওষুধ ইত্যাদি গ্রহণ করার ফলে চুল ঝরে পড়ার সমস্যা লক্ষ্য করা যায়।

৭) কেমোথেরাপির কারণে চুল ঝরে যায়

ক্যানসার চিকিৎসায় কেমোথেরাপি দেওয়ার পর চুল ঝরে যায়। কেমোথেরাপির প্রথম ডোজ দেওয়ার দুই-তিন সপ্তাহ পর থেকেই চুল পড়া শুরু হয়। অন্যদিকে কেমোর সর্বশেষ ডোজ দেওয়ার তিন-চার মাস পর থেকে পুনরায় চুল গজাতে শুরু করে। তাছাড়া মাথা ও গলায় রেডিয়েশন দেওয়া হলেও চুল ঝরে পড়ে যায়।

৮) চুলের স্টাইল বা প্রসাধন চুল ঝরে পড়ার কারণ হতে পারে

চুলের বিশেষ কোনো স্টাইলের জন্য যদি দীর্ঘদিন খুব টেনে চুল বাঁধা হয় বা টাইট করে খোঁপা বা ব্যান্ড করা হয়, তবে চুল ঝরে পড়ার সমস্যা শুরু হয়। দীর্ঘদিন একই রকম চুল বাঁধার কারণে চুল পড়া পুনরায় আগের অবস্থায় ফিরে যায় না। খুব বেশি পরিমাণে চুল রঙিন করার প্রসাধন, তাপ দিয়ে চুল সোজা করা বা ক্রমাগত রিবন্ডিং করলে চুল পড়ার হার বেড়ে যায়। কিছু ক্ষেত্রে আবার চুল গজায়। কিন্তু অনেক সময় হেয়ার ফলিকলের (যে গ্রন্থি থেকে চুল হয়) স্থায়ী ক্ষতি হয়ে গেলে, চুল আবার নাও গজাতে পারে।

৯) চুল ঝরে পড়ার কারণ আপনার দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপ নয়তো?

দুশ্চিন্তায় থাকলে বা মানসিক চাপে থাকলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি চুল ঝরে পড়তে পারে। যদিও এই চুল পড়া সাময়িক এবং পুনরায় চুল গজায়। তবে দীর্ঘদিন মানসিক দুশ্চিন্তায় থাকলে বা দুশ্চিন্তা কাটিয়ে উঠতে না পারলে অনেক বেশি চুল ঝরে যেতে পারে।

★ আরও পড়ুন :
(১) খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রা পরিবর্তনের মাধ্যমে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখবেন কীভাবে?
(২) উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায়।
(৩) মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার বিভিন্ন কারণগুলো কী কী?

ভালোবাসা ছড়িয়ে দিন

মন্তব্য করুন