দাঁত নড়ার কারণ এবং এই সমস্যার প্রতিকার জানার আগে দাঁতের গঠন নিয়ে অল্প জেনে নেওয়া দরকার। তাহলে ব্যাপারটা বুঝতে সুবিধাজনক হবে। আমাদের দাঁত চোয়ালের হাড়ের সাথে আটকে থাকে। হাড় ও দাঁতের মাঝখানে থাকে আণুবীক্ষণিক কিছু লিগামেন্ট, যা দাঁতকে চোয়াল ও মাড়ির মধ্যে আটকে রাখতে সাহায্য করে। দাঁত, মাড়ি, হাড় ও লিগামেন্টগুলিকে একসঙ্গে পেরিওডন্সিয়াম বলে। এগুলির কোনও একটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে দাঁত নড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
Table of Contents
দাঁত নড়ার কারণ কী?
দাঁত নড়ার এক বা একাধিক কারণ থাকতে পারে। বয়স, দাঁতের গঠন, দাঁতের মাড়ির ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ, স্বাস্থ্যবিধির অজ্ঞানতা বিভিন্ন কারণে দাঁত নড়ে। দাঁত নড়ার সাধারণ কারণগুলি নিয়ে নীচে আলোচনা করা হল –
১) শিশুদের দাঁত নড়া স্বাভাবিক
শিশুদের ক্ষেত্রে দুধে-দাঁত প্রতিস্থাপিত হয়ে নতুন দাঁত বের হয়। ৬ থেকে ১২ বছর বয়সী বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এটি হয়। নতুন দাঁত বের হওয়ার কয়েকদিন আগে থেকে দুধে দাঁতগুলি নড়তে শুরু করে। এটি অত্যন্ত স্বাভাবিক ঘটনা। চিন্তা কিছু নেই।
২) ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ ও ক্যালকুলাস সৃষ্টি দাঁত নড়ার অন্যতম কারণ
স্বাভাবিক অবস্থায় আমাদের দাঁতগুলি মাড়ি ও চোয়ালের হাড়ের মধ্যে দৃঢ় ভাবে আটকে থাকে। এখন ঠিক ভাবে নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার না হলে, সমস্যা সৃষ্টি হয়। দুই দাঁত ও মাড়ির মাঝে খাদ্যদ্রব্য আটকে থাকলে সেখানে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ শুরু হয়। মিস্টি বা শর্করাজাতীয় খাদ্যগ্রহণে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ফলে ক্রমে দাঁতের গোড়ায় প্লাক জমতে থাকে। এইভাবে মাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে সংক্রমণ হলে, কিংবা শক্ত পাথরের মতো পদার্থ (ক্যালকুলাস) জমলে মাড়ি নীচের দিকে নেমে যায়। আবার দাঁতের গোড়ায় যে হাড় থাকে, তা প্লাকের অ্যাসিডের কারণে দুর্বল হয়ে যায়। ফলস্বরূপ একটি বা একাধিক দাঁত নড়তে শুরু করে।
৩) দাঁতের ত্রুটিপূর্ণ গঠনের কারণে অসম কামড় দাঁত নড়ার একটি কারণ
অনেক সময় দাঁতের ত্রুটিপূর্ণ গঠন দাঁত নড়ার অন্যতম কারণ হতে পারে। ওপরের দাঁতগুলির সঙ্গে নীচের দাঁতগুলির সামঞ্জস্যের অভাবে খাদ্যগ্রহণ বা কথা বলার সময় এক বা একাধিক দাঁতের ওপর অস্বাভাবিক চাপ পড়ে। দীর্ঘদিন ধরে বিনা চিকিৎসায় এরকম হতে থাকলে দাঁত নড়ে যাওয়ার সম্ভবনা বৃদ্ধি পায়।
৪) আঘাতের কারণে দাঁত নড়তে পারে
দাঁতের ওপর খুব জোরে আঘাত লাগলেও দাঁত নড়তে পারে। সড়ক দুর্ঘটনা বা খেলাধুলোর সময় বা হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়ে দাঁতে আঘাত লাগতে পারে। সেক্ষেত্রে দাঁত নড়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেকক্ষেত্রে দাঁত উঠেও যায়।
৫) হাড়ের ক্ষয়রোগ বা অস্টিওপোরোসিস
অস্টিওপোরোসিস বা হাড় ক্ষয়ে যাওয়ার কারণে দাঁত নড়তে পারে। ভিটামিন D ও ক্যালসিয়ামের অভাবে দাঁতের গোড়ার হাড়ে ক্ষয় দেখা যায়। ফলে দাঁত নড়ে যায়।
৬) দাঁত নড়ার হরমোনজনিত কারণ
হরমোনজনিত কারণে মহিলাদের অনেক সময় দাঁত নড়ে। প্রেগন্যান্সি ও মেনোপজের সময় মহিলাদের শরীরে প্রজেস্টেরন ও ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। এর প্রভাবে চোয়ালের হাড় ক্ষয় পায় এবং দাঁত নড়ার সমস্যা দেখা যায়।
- ডাবের জল খাওয়ার উপকারিতা | ডাবের জলের উপকারিতা
- আঙুর খাওয়ার উপকারিতা | আঙুরের উপকারিতা
- খেজুরের উপকারিতা | খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
- তরমুজের উপকারিতা | তরমুজ খাওয়ার ৮ টি উপকারিতা
- পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা | পেয়ারার পুষ্টিগুণ ও পেয়ারার উপকারিতা
- দাঁত নড়ার কারণ ও প্রতিকার | দাঁত নড়লে কী করবেন?
দাঁত নড়ার সমস্যার প্রতিকার ও কিছু ঘরোয়া টোটকা
চোর পালিয়ে যাওয়ার পর বুদ্ধি না বাড়িয়ে, চুরি হওয়ার আগেই পাকাপোক্ত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তাই দাঁত থাকতেই দাঁতের মর্যাদা বা গুরুত্ব বুঝতে শিখুন। কারণ প্রতিরোধই হল আরোগ্যলাভের সেরা উপায়।
- দিনে দু’বার করে ব্রাশ করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। বাড়ির বাচ্চাদের শেখান। একবার সকালে ঘুম থেকে উঠে ও একবার ঘুমাতে যাওয়ার আগে। প্রতিবার খাদ্যগ্রহণের পর কুলকুচি করে মুখগহ্বর ভালো করে পরিষ্কার করতে হবে।
- ব্রাশ করার সময় মাড়ি থেকে রক্ত বের হচ্ছে কি না লক্ষ্য করুন। মাড়ি ফুললে, দাঁত শিরশির করলে বা দাঁতে কোনও রকম ব্যথা হলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
- দুই চোয়ালের দাঁতে সামঞ্জস্যের অভাব থাকলে চিকিৎসা করিয়ে নিন। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো দাঁতে ব্রেস লাগিয়ে সমস্যার সমাধান করা যায়।
- দাঁত নড়লে বা ব্যথা অনুভব করল শক্ত খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলুন। উষ্ণ সবজি বা মুরগির স্যুপ খাওয়াই ভাল। এতে ব্যথা এবং প্রদাহ উপশম হবে। এছাড়া এটি শরীরে পুষ্টির যোগান দেবে যা সংক্রমণের সঙ্গে লড়তে সাহায্য করবে।
- ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাদ্যগ্রহণ করুন। ভিটামিন সি মাড়ি ও দাঁতের সংযোগস্থানের কলাকোশ নিরাময় করতে সাহায্য করে। আমলকির রস মাড়ি ও দাঁতের গোড়ায় দিন। নিয়মিত আমলকি খান। এতে ভালো ফল পাওয়া যায়।
- ঈষদুষ্ণ গরম জলে লবণ দিয়ে কুলকুচি করুন। লবণের এন্টিসেপটিক বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে মুখের সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। তাছাড়া লবণ-জল আপনার মাড়ি শক্ত করবে এবং দাঁত নড়া প্রতিরোধ করবে। আলগা দাঁতের জন্য এটি অন্যতম সহজ ঘরোয়া প্রতিকার।
- সর্ষের তেলের সঙ্গে লবণ মিশিয়ে সেই মিশ্রণ ব্যবহার করেও দাঁত নড়ার সমস্যায় উপকার পাওয়া যায়। সর্ষের তেলের সঙ্গে লবণ মিশিয়ে, সেই মিশ্রণ মাড়িতে লাগিয়ে দিতে হবে।
- দাঁত নড়ার সমস্যায় লবঙ্গ-তেল মাড়িতে মালিশ করলে উপকার পাওয়া যায়। তাছাড়া মুখে লবঙ্গ রাখলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয় এবং তা দাঁতের জন্য উপকারি।
- দাঁত সাদা করার জন্য রাসায়নিক ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। এতে দাঁতের এনামেল নষ্ট হয়, মাড়ির কোষগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে দাঁতের অনেক ক্ষতি হয়, দাঁত নড়ার সমস্যা সৃষ্টি হয়। সেই সঙ্গে কোল্ড ড্রিংকস ও মিষ্টি সোডা জাতীয় খাবার কম খাওয়া উচিত।
তবে আক্ষরিক অর্থেই দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা রাখা উচিত। কারণ আপনার হাসিমুখের সৌন্দর্যের প্রধান অংশীদার কিন্তু ওই দাঁত-ই। তাই দাঁত নড়ার কারণ গুলি জেনে নিয়ে এখন থেকেই সচেতন হওয়া উচিত।