তরমুজের উপকারিতা অনেক। গ্রীষ্মকালীন ফলের মধ্যে অন্যতম ফল তরমুজ। তীব্র গরমে তৃষ্ণা মেটাতে তরমুজের চাহিদা খুব। সবুজ খোলায় ঢাকা লাল রসালো ফল যেমন খেতে সুস্বাদু, ঠিক তেমনি এর উপকারিতাও অনেক। তেমনি তরমুজ খাওয়ার ৮ টি উপকারিতা নিয়ে নীচে আলোচনা করা হল।
Table of Contents
তরমুজ খাওয়ার ফলে শরীরে জলের ঘাটতি পূরণ হয়
শরীরের স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপ ঠিক রাখার জন্য জলের গুরুত্ব অপরিসীম। বিভিন্ন অঙ্গ ও তন্ত্রের কর্মক্ষমতা ঠিক রাখা, দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, কোশে কোশে পুষ্টির সরবরাহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই পর্যাপ্ত জলের আবশ্যক।
অথচ গরমের দিনে ঘামের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে জল দেহের বাইরে বেরিয়ে যায়। তাই জলসমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করা আবশ্যক হয়ে দাঁড়ায়। তরমুজের মধ্যে প্রায় ৯২% জল থাকে। তাই দেহে জলের ঘাটতি পূরণের ক্ষেত্রে তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া কম ক্যালোরিযুক্ত হওয়ায় দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণেও সমস্যা হয় না।
তরমুজ বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান ও খনিজে ভরপুর
তরমুজের প্রায় ৯২% জল থাকলেও তরমুজের পুষ্টিগুণ কিন্তু অনেক। কারণ, তরমুজে বিভিন্ন পুষ্টি-উপাদান পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে। পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন A, ভিটামিন C ছাড়াও অন্যান্য খনিজ ও উপাদানে ভরপুর তরমুজ।
প্রতি ১০০ গ্রাম তরমুজে প্রায় ৯১.৪ গ্রাম জল, ৩০ কিলোক্যালোরি শক্তি, ১১২ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম, ১০ মিলিগ্রাম ম্যাগনেশিয়াম, ১১ মিলিগ্রাম ফসফরাস থাকে। তাছাড়া থাকে নিত্য প্রয়োজনের ৫% ভিটামিন A ও ১৪% ভিটামিন C (সূত্র – USDA)।
তাছাড়া তরমুজে সাইট্রুলিন (Citrulline) নামের এক অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে, যা আমাদের শরীরচর্চার উপকারিতা বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়া লাইকোপিন, ক্যারোটিনয়েড, ভিটামিন C থাকায় শরীরে অ্যান্টি অক্সিডেন্টের চাহিদা পূরণ হয়।
তরমুজ আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
যে সব খাদ্য খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, তার মধ্যে তরমুজ অন্যতম। এটি যেমন সহজলভ্য, তেমনি ভিটামিন C, ভিটামিন B6-এ ভরপুর। ভিটামিন C রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, উল্টোদিকে ভিটামিন B6 অ্যান্টিবডি গঠনে সাহায্য করে।
আবার তরমুজ হল লাইকোপিন নামের এক অ্যান্টি অক্সিডেন্টের অন্যতম উৎস। তরমুজের লাল রং এই লাইকোপিনের কারণেই হয়। এই লাইকোপিন অক্সিডেটিভ স্ট্রেস মোকাবিলা করতে সাহায্য করে। বিপাকজাত ফ্রি-রেডিক্যালস্ ও তার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে লাইকোপিন আমাদের রক্ষা করে। বিভিন্ন ক্রনিক রোগ যেমন – হৃদরোগ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, অ্যালঝাইমার্স প্রভৃতি রোগ হওয়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে লাইকোপিন।
তরমুজ রোদের তীব্রতার হাত থেকে রক্ষা করে
তরমুজ খাওয়ার ফলে রোদের তীব্রতাজনিত হিট স্ট্রোকের সম্ভবনা কমে। হিট স্ট্রোক এমন এক বিদপজনক সমস্যা যে এতে জীবনহানীও হতে পারে। তরমুজে থাকা ইলেক্ট্রোলাইট হিট স্ট্রোকের সম্ভবনা কমিয়ে দেয়। তরমুজ শরীরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রেখে, শরীর ও মস্তিষ্ককে ঠান্ডা রাখে।
ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্যের জন্য তরমুজ খাওয়া উপকারি
চুল ও ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য ভিটামিন A ও ভিটামিন C খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তরমুজে এই দুটি ভিটামিনই পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে। ভিটামিন C শরীরে কোলাজেন নামের প্রোটিন তৈরিতে সাহায্য করে, যা চুল শক্তিশালী করে। তাছাড়া ত্বকের বলিরেখা ও শুষ্কতা দূর করতেও সাহায্য করে। উল্টোদিকে ভিটামিন A ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি ও পুরানো ত্বক ঝরিয়ে দিয়ে নতুন ত্বক সৃষ্টিতে সাহায্য করে। তাই বলাই যায়, ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্যের জন্য তরমুজ খাওয়া খুবই উপকারি। তবে তরমুজ শুধুমাত্র খাওয়া ছাড়াও, পেস্ট বানিয়ে ত্বকে লাগালেও উপকার পাওয়া যায়।
হার্টের স্বাস্থ্যের জন্যও তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা আছে
তরমুজের বেশ কিছু উপাদান হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। হার্টের অস্বাস্থ্যের মূল কারণ কোলেস্টেরল ও উচ্চ রক্তচাপ। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, তরমুজে অল্প পরিমাণে লাইকোপিন থাকে। এই লাইকোপিন রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল(LDL) এর মাত্রা এবং উচ্চ রক্তচাপ কমায়। ফলে হার্ট সুস্থ থাকে।
তাছাড়া তরমুজে থাকা সাইট্রুলিন (Citrulline) দেহে নাইট্রিক অক্সাইডের মাত্রা বাড়ায়। এই নাইট্রিক অক্সাইড রক্তনালিকে স্ফীত হতে সাহায্য করে। ফলে রক্তচাপ হ্রাস পায়। তরমুজের পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ভিটামিন A, B6, C প্রভৃতি উপাদানও স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারি।
আরও পড়ুন : (১) উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায়। (২) কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখবেন কী ভাবে? (৩) মাথার চুল ঝরে পড়ার কারণগুলি কী কী? (৪) মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার কারণগুলো কী কী? (৫) নাক ডাকার কারণ ও সমাধান।
তরমুজে ক্যান্সার-প্রতিরোধী উপাদান বর্তমান
তরমুজে উপস্থিত লাইকোপিন ও কিউকারবিটাসিন ই (Cucurbitacin E) এর মধ্যে ক্যান্সার প্রতিরোধী গুণ লক্ষ্য করা যায়।
বেশ কিছু গবেষণায় লক্ষ্য করা গেছে, প্রোস্টেট ও কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে লাইকোপিন। লাইকোপিন রক্তে IGF এর মাত্রা কমিয়ে অনিয়ন্ত্রিত কোশবিভাজনের হার হ্রাস করে, যা ক্যান্সারের অন্যতম কারণ।
আবার কিউকারবিটাসিন ই ক্যান্সার কোশের অটোফ্যাজিকে প্রভাবিত করে, টিউমার বৃদ্ধিতে বাঁধা দেয়।
তরমুজ রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে
অন্যান্য অনেক ফলের তুলনাতেই তরমুজে গ্লুকোজের পরিমাণ কম থাকে। তাই তরমুজ রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়ায় না। বরং তরমুজে থাকা উপাদান রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। তরমুজ কিডনির মধ্যে L-citrulline (amino acid) কে L-arginine (amino acid)- এ রূপান্তর করতে সাহায্য করে। এই এল-আরজিনাইন (L-arginine) সাপ্লিমেন্ট গ্লুকোজ বিপাক এবং ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।