You are currently viewing জাম খাওয়ার ৯ টি উপকারিতা ৷ জামের পুষ্টিগুণ
জামের পুষ্টিগুণ - জাম খাওয়ার উপকারিতা

জাম খাওয়ার ৯ টি উপকারিতা ৷ জামের পুষ্টিগুণ

ভালোবাসা ছড়িয়ে দিন

জাম খাওয়ার উপকারিতা জানা থাক বা নাই থাক, গ্রীষ্মকালে জাম খান না এমন বাঙালি অনেক কম আছেন। অনেকে এটিকে কালো জাম বলে থাকেন। জামের পুষ্টিগুণ অনেক। ডায়াবেটিস, ক্যান্সার প্রতিরোধ বা হৃৎপিন্ড, পরিপাক তন্ত্র, ত্বক, দাঁত ও হাড়ের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা – সবেতেই জাম খাওয়া বিশেষ উপকারি।

জাম সাধারণত গ্রীষ্মকালে হয়। জুন-জুলাই মাসে ফলটি পাকে। জাম কাঁচা অবস্থায় সবুজ এবং পাকা অবস্থায় কালচে বেগুনি রঙের হয়ে থাকে। জাম ফলের স্বাদ হালকা কষভাবযুক্ত ও মিষ্টি। জাম খাওয়ার পর হালকা বেগুনি রঙের জিভ নিয়ে ছোটবেলার মজা সকলের স্মৃতিতে এখনও উজ্জ্বল।

জামের পুষ্টিগুণ

জামের নানাবিধ পুষ্টিগুণের কারণে জামকে অনেকে “দেবতাদের ফল” (Fruit of the Gods) বলে থাকেন। জাম আকারে ছোট হলেও পুষ্টিগুণে ভরপুর। বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ মৌলসমৃদ্ধ এই ছোট্ট ফলের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। আমেরিকার কৃষিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি ১০০ গ্রাম জামে থাকে –

শক্তি৬০ কিলো ক্যালোরি
শর্করা১৫.৫৬ গ্রাম
স্নেহ পদার্থ০.২৩ গ্রাম
প্রোটিন০.৭২ গ্রাম
থিয়ামিন (ভিটামিন B1)০.০০৬ মিলিগ্রাম
রাইবোফ্লাভিন (ভিটামিন B2)০.০১২ মিলিগ্রাম
নিয়াসিন (ভিটামিন B3)০.২৬ মিলিগ্রাম
ভিটামিন B6০.০৩৮ মিলিগ্রাম
অ্যাসকরবিক অ্যাসিড (ভিটামিন C)১৪.৩ মিলিগ্রাম
ভিটামিন A৩ I U
ক্যালসিয়াম১৯ মিলিগ্রাম
লোহা০.১৯ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেশিয়াম১৫ মিলিগ্রাম
ফসফরাস১৭ মিলিগ্রাম
পটাশিয়াম৭৯ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম১৪ মিলিগ্রাম
জল৮৩.১ গ্রাম
জামের পুষ্টিগুণ

তবে জাম খাওয়ার আগে ভালো করে ধুয়ে নেওয়া উচিত। কাঁচা বা আধপাকা জাম না খাওয়াই উচিত। সেক্ষেত্রে উপকারের থেকে অপকারই বেশি হবে।

১) জাম খাওয়ার ফলে রক্তে শর্করা কমে অর্থাৎ জাম ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য ভালো

জাম খাওয়ার ফলে রক্তে শর্করা কমে। তাই ডায়াবেটিস বা মধুমেহ রোগ এড়াতে জাম উপকারি। তাছাড়া যাঁরা ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তাঁদের জন্যও জাম বিশেষ উপকারি।

গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হওয়ার জন্য, জাম খাওয়ার ফলে রক্তে শর্করা বা চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকে। তাছাড়া জামে থাকে জাম্বোলিন নামের এক উপাদান। এই জাম্বোলিন স্টার্চকে শর্করায় রূপান্তরিত হতে বাধা দেয়। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। জাম ফল ছাড়াও জামের বীজ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিশেষ উপকারি। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা ছাড়াও, জাম ডায়াবেটিসের অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমাতেও সাহায্য করে।

আরও পড়ুন – গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস? জেনে নিন, কী করবেন?

২) জাম খাওয়ার ফলে হাড় মজবুত হয়, দাঁত ভালো রাখে

জাম হল ক্যালশিয়াম, লোহা, পটাশিয়াম, ভিটামিন – C সমৃদ্ধ একটি ফল। এই ক্যালশিয়াম, পটাশিয়াম, লোহা হাড়ের গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে। তাই জাম খাওয়ার ফলে আমাদের হাড় মজবুত হয়, দাঁত ভালো থাকে। তাছাড়া যাঁরা হাড়ের ক্ষয়জনিত রোগে ভুগছেন, তাঁদের জন্যও জাম বিশেষ উপকারি।

৩) সংক্রমণ রোধ করতে জাম খাওয়ার উপকারিতা আছে

জামে পর্যাপ্ত ভিটামিন C থাকায় এটি দাঁত, মাড়ির সংক্রমণ রোধ করে। তাছাড়া জামে ম্যালিক অ্যাসিড, অক্সালিক অ্যাসিড, ট্যানিন প্রভৃতি অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ইনফেক্টিভ উপাদানগুলো থাকে। তাই জাম সংক্রমণ রোধ করতে জামের উপকারিতা আছে।

৪) জাম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

জামে ভিটামিন B-কমপ্লেক্সের বিভিন্ন ভিটামিনগুলি থাকে। সেই সঙ্গে জামে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন C থাকে। তাছাড়া জামে বিভিন্ন অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপস্থিত থেকে। তাই জাম খাওয়ার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সাধারন জ্বর-সর্দির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করে। জামে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্টগুলি দেহের ফ্রি-রেডিক্যালগুলিকে দূর করতে সাহায্য করে।

৫) রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়ায় জাম খাওয়া উপকারী

জামের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে লোহা বা আয়রন থাকে। এই লোহা হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে মুখ্য ভূমিকা নিয়ে থাকে। তাই যাঁরা রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়ায় ভুগছেন তাঁদের জন্য জাম বিশেষ উপকারি। জাম খাওয়ার ফলে তাঁদের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা তথা লোহিত রক্তকণিকার পরিমাণ বাড়ে। বেশি পরিমাণে হিমোগ্লোবিন রক্তে থাকায় বিভিন্ন অঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন পৌঁছাবে। আপনার সুস্থতা বজায় থাকবে।

আরও পড়ুন –
১) কালো গাজর খাওয়ার উপকারিতা
২) সুপার ফুড 'সজিনা পাতা'
৩) টমেটো খাওয়ার ১০টি উপকারিতা
৪) আদা খাওয়ার উপকারিতা 

৬) ক্যান্সার প্রতিরোধে জাম খাওয়ার উপকারিতা আছে

জামে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্টগুলি দেহের ক্ষতিকর ফ্রি-রেডিক্যালগুলি দূর করে। ক্যান্সার সৃষ্টিতে এই ফ্রি-রেডিক্যালগুলির ভূমিকা থাকে। তাছাড়া জামের কেমো-প্রটেক্টিভ বৈশিষ্ট্যগুলি নিয়ে গবেষণা চলছে। জামে উপস্থিত পলিফেনলের কারণে জাম অ্যান্টি-কার্সিনোজেনিক হয়।

জরায়ু, ডিম্বাশয় ও মলদ্বারের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে জামের উপকারিতা আছে। তাছাড়া মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধেও জামের বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা আছে।

৭) জাম খাওয়ার ফলে হৃৎপিন্ড (Heart) ভালো থাকে

জাম খাওয়ার ফলে হৃৎপিন্ডও ভালো থাকে। জাম রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। সেই কারণে হৃৎপিন্ডও ভালো থাকে।

জামে থাকে ভিটামিন C, ভিটামিন B6, অ্যালজিনিক অ্যাসিড (alginic acid) বা অ্যালজিট্রিন (algitrin), অ্যান্থোসিয়ানিন (anthocyanin) এবং অ্যান্থোসায়ানাডিন (anthocyanidin)। এই উপাদানগুলি রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। আবার জামে থাকা পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাই জাম খাওয়ার ফলে কোলেস্টেরল ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং হৃৎপিন্ড ভালো থাকে।

৮) জাম পরিপাকে সাহায্য করে

জামে যথেষ্ট পরিমাণে ফাইবার আছে। এই ফাইবার যকৃতকে সক্রিয় করে ও হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। যাঁদের অম্বলের সমস্যা আছে, জাম খাওয়ার ফলে তাঁদের উপকার হয়। তাছাড়া জামে থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।

৯) চোখ ও ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য জাম উপকারি

জামে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন A ও ভিটামিন C থাকে। তাছাড়াও এতে আছে বিভিন্ন খনিজ। এই ভিটামিন ও খনিজগুলি চোখ ও ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।

জামে থাকা ভিটামিন A চোখের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি। রাতকানা রোগ ও যাঁদের চোখের ছানির অপারেশন হয়েছে, তাঁদের জন্য জাম খাওয়ার উপকারিতা অনেক।

ভিটামিন C ও অন্যান্য অ্যান্টি-অক্সিডেন্টগুলি উপস্থিত থাকার কারণে, ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্যও জামের উপকারিতা রয়েছে। বিশেষত ব্রণ নিরাময়ে, ত্বকের তেলভাব দূর করতে জাম খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে।


ভালোবাসা ছড়িয়ে দিন

মন্তব্য করুন