চিকিৎসা বিদ্যায় নোবেল ২০২১ ঘোষণা করা হল গত ৪ঠা অক্টোবর ২০২১, সোমবার। নোবেল কমিটির সেক্রেটারি জেনারেল থমাস পার্লম্যান এই ঘোষণা করেন। দুই মার্কিন বিজ্ঞানী ডেভিড জুলিয়াস এবং আরডেম পাটাপৌটিয়ান যৌথভাবে এই পুরস্কার পেলেন। আমাদের ত্বকের যে রিসেপ্টর তাপমাত্রা ও স্পর্শের অনুভব গ্রহণ করে, তা আবিষ্কারের জন্য এই নোবেল পুরস্কার দেওয়া হল তাঁদের। এই আবিষ্কারের ফলে ক্রনিক ব্যাথা বা যন্ত্রনা উপশম সহ বিভিন্ন চিকিৎসা আরও সহজতর হবে।
এই ঘোষণায় আরও জানানো হয়, আগামী ডিসেম্বরে বিজয়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে নোবেল পুরস্কারের পদক, সনদ ও অর্থ। তবে করোনা মহামারীর কারণে এবারেও বিজয়ীদের নিজের নিজের দেশেই পুরস্কার প্রদান করা হবে। চিকিৎসা বিদ্যায় বিশেষ অবদানের জন্য ১৯০১ সাল থেকে প্রতিবছরই চিকিৎসা বিদ্যায় নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। এখনও পর্যন্ত মোট ১১৩ জন চিকিৎসা বিদ্যায় নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন।

আরডেম পাটাপৌটিয়ান তাঁর নোবেল পাওয়ার খবর পেয়েছেন তাঁর বৃদ্ধ বাবার থেকে। ওনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে উনি বলেন, “আমার ফোনে ‘ডু নট ডিস্টার্ব’ পরিষেবা চালু থাকায় নোবেল কমিটি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন নি। তাঁরা কোনোভাবে আমার বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করে এই খবর দেন। এবং আমি বাবার থেকেই এই আনন্দের খবর প্রথম পাই।” তাঁর গবেষণা নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, “আমরা যেগুলিকে অত্যন্ত স্বাভাবিক বলে ধরে নিই, বিজ্ঞানে সেগুলিই গভীর আগ্রহের বিষয়।” অন্যদিকে ডেভিড জুলিয়াস তাঁর সিস্টার-ইন-ল এর থেকে প্রথম এই খবর পান। কিন্ত নিজেকে চিমটি কাটার মতোই ইউটিউব ভিডিওতে অ্যানাউন্সমেন্ট শুনে, তবেই আশ্বস্ত হন।
প্রকৃতিকে আমরা কীভাবে অনুভব করি, তা গভীর বিস্ময়ের বিষয়। এই নিয়ে অনেক গবেষণা আগেও হয়েছে, এখনও হচ্ছে। আমরা সকলেই জানি, আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য চাপ, তাপের অনুভব থাকা আবশ্যিক। এই চাপ, তাপ, ঠান্ডা কীভাবে স্নায়ুতে উদ্দীপনা সৃষ্টি করে এবং আমরা সেই অনুযায়ী বহিঃপ্রকৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিই। তাপ, চাপ কীভাবে অনুভূত হয়, সেই বিষয়েই গবেষণা করেছেন এই দুই নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী।
ধরুন, আপনি গরম চা বা কফি পান করছেন। কোনো তাপ অনুভূত হচ্ছে না। তাহলে আপনার জিভের অবস্থা কেমন হবে? কিংবা ধরুন দরজায় আপনার আঙ্গুল চিমটে গেছে, অথচ আপনার কোনো অনুভব নেই! কিন্তু স্বাভাবিক অবস্থায় আমাদের এই তাপ, চাপ অনুভূত হয়। কিন্তু কীভাবে হয়, তা সঠিক ভাবে তথা সূক্ষ্ম ভাবে জানা নেই! তা নিয়েই গবেষণা এই দুই নোবেলজয়ী বিজ্ঞানীদের।
আরও পড়ুন : (১) বিয়ের আগে কোন কোন মেডিকেল টেস্ট করা দরকার? (২) গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস? জেনে নিন কারণ, ঝুঁকি ও সমাধান। (৩) উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায়। (৪) নাক ডাকার কারণ ও সমাধান।
ক্যাপসাইসিন নামের এক রাসায়নিক যা কাঁচা লঙ্কায় থাকে, তা নিয়ে গবেষণা করেছেন জুলিয়াস। ক্যাপসাইসিন জনিত জ্বালা সংবেদন করে কোন স্নায়ু সেন্সর তাপ উৎপন্ন করে, সেই নিয়ে তিনি গবেষণা করেছেন। কারণ, বিভিন্ন জ্বালা বা প্রদাহ শনাক্ত করে আমাদের শরীর তাপ উৎপন্ন করে এবং ক্ষতিগ্রস্ত অংশকে রক্ষা করে। জুলিয়াস এবং তাঁর অন্যান্য সহযোগীরা মিলে TRPV1 নামের এক প্রোটিনকে শনাক্ত করতে সমর্থ হন, যা তাপ সংবেদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। তাছাড়া জুলিয়াস ও পাটাপৌটিয়ান উভয়েই একক ভাবে TRPM8 নামের আর এক প্রোটিন শনাক্ত করেন। এই TRPM8 ঠান্ডা অনুভব করতে কাজে লাগে।
অন্যদিকে স্পর্শে সাড়া দেয় কোন শ্রেণীর স্নায়ু সেন্সর, তা আবিষ্কারে পাটাপৌটিয়ানের ভূমিকা আছে। তিনি এবং তাঁর সহযোগীরা মিলে Piezo1 এবং Piezo2 নামের দুটি প্রোটিন শনাক্ত করতে সক্ষম হন। এই প্রোটিনদুটি চাপ অনুভবে বিশেষ ভূমিকা নিয়ে থাকে।
এই দুই মার্কিন বিজ্ঞানীর গবেষণা যে চিকিৎসা বিদ্যাকে আরও বেশ কিছুটা এগিয়ে দেবে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।