You are currently viewing গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস? উপেক্ষা নয়, গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে কী করণীয় জানুন।
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস Gestational diabetes mellitus (GDM)

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস? উপেক্ষা নয়, গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে কী করণীয় জানুন।

ভালোবাসা ছড়িয়ে দিন

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস কী?

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস বা Gestational diabetes mellitus (GDM) বা গর্ভাবস্থায় মায়ের রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া। খুব একটা অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। তবে উপেক্ষা করারও ব্যাপার নয়। কারণ, গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস শুধু মা নয়, একই সঙ্গে অপত্য শিশুর জন্যও বিভিন্ন ঝুঁকির সৃষ্টি করে। চিকিৎসকদের মতে, গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস ধরা পড়লে অতি অবশ্যই গর্ভবতী মাকে বেশ কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে বা নিয়ম মানতে হবে।

গর্ভাবস্থার আগেই অনেক মহিলার ডায়াবেটিস থাকে, কিন্তু সমস্যা না হওয়া বা রক্ত পরীক্ষা না করার জন্য তাঁরা অনেকেই জানেন না – এমনও হয়। তাই গর্ভাবস্থার প্রথম ১২ সপ্তাহে ডায়াবেটিস ধরা পড়লে বলা হয়, তাঁদের আগেই ডায়াবেটিস ছিল। সেক্ষেত্রে গর্ভকালীন সময়ে এই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখলে মা ও গর্ভস্থ শিশু উভয়েরই ঝুঁকির সম্ভবনা রয়ে যায়।

আবার, গর্ভধারণের পূর্বে ডায়াবেটিস না থাকা সত্ত্বেও গর্ভধারণের পর হরমোনের পরিবর্তনজনিত কারণে অনেকক্ষেত্রে মায়ের রক্তে ইনসুলিনের পরিমান কমে যায় এবং ফলস্বরূপ রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। এই অবস্থাকেই গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস বা Gestational diabetes mellitus (GDM) বলে অভিহীত করা হয়।

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস বা Gestational diabetes mellitus (GDM)
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস । Gestational diabetes mellitus (GDM)

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের লক্ষণ কী?

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসে (Gestational Diabetes Mellitus বা GDM) আক্রান্ত গর্ভবতী মায়েদের সাধারণত আলাদা করে কোনো লক্ষণ দেখা যায় না, যা দেখে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস শনাক্ত করা যায়। এই কারণেই অনেক সময় গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস শনাক্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা নেওয়া হয়ে ওঠে না, যা মা ও শিশুর জন্য বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করে। তবে ঠিক সময়ে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস ধরা পড়লে, শিশুমৃত্যুর হার অনেকটাই কমানো যায়। তাই গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস শনাক্ত করার জন্য এবং মা এবং বাচ্চার শারীরিক অন্যান্য অবস্থা জানার জন্য গর্ভাবস্থার ২৪ সপ্তাহ থেকে ২৮ সপ্তাহের মধ্যে একটি সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস থাকলে এই স্বাস্থ্য পরীক্ষাতেই তা ধরা পড়ে যায়।

তাছাড়া, নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি যদি গর্ভাবস্থায় দেখা যায়, তবে অতিরিক্ত সতর্কতা হিসাবে পরীক্ষা করে দেখে নিশ্চিত হওয়া উচিত যে, গর্ভবতী মা গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসে ভুগছেন কিনা –

  • পর্যাপ্ত জল পান করা সত্ত্বেও ঘন ঘন জল পিপাসা পাওয়া।
  • মুখ-জিভ শুষ্ক হয়ে যাওয়া।
  • চোখে ঝাপসা দেখা।
  • স্বাভাবিকের থেকে বেশি প্রসাব করা।
  • গর্ভাবস্থায় ক্লান্তি স্বাভাবিক হলেও, অতিরিক্ত ক্লান্ত হয়ে যাওয়াও গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের লক্ষণ।
  • প্রথম ত্রৈমাসিকেই অত্যাধিক বমি-বমি ভাব।
  • ঘন ঘন সংক্রমণ হওয়া।
  • ক্ষুধা বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও ওজন কমে যাওয়া।

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের কারণ কী?

আমাদের রক্তে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে ইনসুলিন যা অগ্ন্যাশয় থেকে ক্ষরিত হয়।

গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন হয় (ভ্রূণ ও প্লাসেন্টা গঠন, ভ্রূণের বেড়ে ওঠা ইত্যাদি) এবং সেই কারণে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় হরমোন প্লাসেন্টা থেকে নিঃসৃত হয় যা রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি করে। স্বাভাবিক ভাবে এই অতিরিক্ত শর্করা নিয়ন্ত্রণের জন্য শরীর অতিরিক্ত ইনসুলিন ক্ষরণ শুরু করে। কিন্তু অনেক সময় শরীর অতিরিক্ত ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়তে থাকে এবং ফলস্বরূপ গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হয়।

আবার, ইনসুলিনের ক্ষরণের সঙ্গে ওজনবৃদ্ধির একটি সূক্ষ্ম সম্পর্ক আছে। গর্ভধাণের পর সাধারণভাবে প্রসূতির ওজন বৃদ্ধি হয়। সেই কারণেও ইনসুলিন ক্ষরণ প্রভাবিত হয়, যা গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের পরোক্ষ কারণ হিসেবে কাজ করে।

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভবনা কাদের বেশি?

বাংলাদেশ ও ভারতে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হওয়ার হার প্রায় প্রতি ১০০ জন প্রসূতি পিছু কমবেশি ১০ জন, যা যথেষ্ট চিন্তার কারণ। চিকিৎসকদের মতে বেশ কিছু মহিলার ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভবনা অন্য মহিলাদের তুলনায় বেশি। তাই তাঁদের অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। নিম্নলিখিত কারণগুলি উপস্থিত থাকলে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যায় –

  • যে সমস্ত মহিলা এমনিতেই ওবেসিটির শিকার বা গর্ভধারণের আগে থেকে ওজনবৃদ্ধিজনিত সমস্যায় ভুগছেন, গর্ভধারণের পর তাঁদের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে।
  • গর্ভধারণের পর যে সব মহিলা অতি দ্রুত অতিরিক্ত মোটা হয়ে যান, তাঁদের গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে।
  • পূর্ববর্তী গর্ভধারণের সময় গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হয়ে থাকলে আবার হওয়ার সম্ভবনা অনেকটাই বেশি। সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত সাবধানতা নেওয়া উচিত।
  • আবার যে সব মহিলার প্রসব করা বাচ্চার ওজন চার কেজি বা তার বেশি ছিল, তাঁদের পরবর্তী গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
  • গর্ভবতী মায়ের রক্তের সম্পর্কিত বাবা, মা, ভাই বা বোনের কারও টাইপ-২ ডায়াবেটিস থাকলে সেই মহিলার গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভবনা আছে।
  • ৩০ বছর বা তার বেশি বয়সে গর্ভধারণের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভবনা আছে।
  • যে সব মহিলা পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত তাঁদের ইনসুলিন ক্ষরণের তারতম্যের জন্য গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভবনা আছে।
  • উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল বা হার্টের সমস্যা থাকলে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভবনা আছে।

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস এড়াতে কী করবেন?

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভবনা থাকুক বা নাই থাকুক, খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ বা ব্যায়ামের মতো বেশ কিছু সাধারণ বিষয় মেনে চললে প্রসূতি মা গর্ভবস্থায় ডায়াবেটিস এড়াতে পারেন –

  • সর্বপ্রথমেই গর্ভধারণের আগে এবং গর্ভধারণের পর নিজের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে উদ্যোগী হতে হবে।
  • তেল-ঝালযুক্ত খাবার যা ওজন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ যতটা পারবেন এড়িয়ে চলুন।
  • মিষ্টি খাওয়ার পরিমান কমিয়ে দিন, সম্ভব হলে একদম এড়িয়ে চলুন।
  • আঁশযুক্ত খাবার, সবজি, ফল – এইরূপ স্বাস্থ্যকর খাবার খান।
  • বারেবারে অল্প অল্প খান। একবারে অনেকটা খাওয়ার পরিবর্তে তিন-চার ঘন্টার ব্যবধানে অল্প অল্প খান।
  • পর্যাপ্ত জলপান করুন। সফ্ট ড্রিঙ্কস বা কোল্ড ড্রিংকস এবং অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন।
  • গর্ভধারণের আগে এবং গর্ভধারণের পর চিকিৎসকের পরামর্শ মতো নিয়মিত ব্যায়াম করুন। হালকা শরীরচর্চা, হাঁটাহাঁটি করে শরীরকে সচল রাখুন, ঘাম ঝরান।
  • চিকিৎসকের পরামর্শ মতো নিয়ম করে রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করে নিন এবং সঠিক সময়ে সতর্ক হোন।

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কী কী?

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে গর্ভবতী মা ও অপত্য শিশু উভয়ের জন্যই তা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসে অপত্য শিশুর ঝুঁকি কতটা?

প্রসূতি মায়ের গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে অপত্য শিশুর জন্য বেশ কিছু ঝুঁকির সৃষ্টি হয় –

বড়ো আকৃতির বাচ্চা প্রসব :

গর্ভবতী মায়ের রক্তে গ্লুকোজ বৃদ্ধি বা গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস থাকার কারণে অনেক বড়ো আকৃতির বাচ্চা প্রসব হতে পারে। বাচ্চার ওজন ৪ কেজি বা তারও বেশি হতে পারে। ফলে প্রসবকালে বাচ্চার আঘাত পাওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে এবং প্রয়োজনে সি-সেকশন করে বাচ্চা বের করতে হতে পারে।

নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই অপরিণত বাচ্চা প্রসব :

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস প্রসূতির প্রিটার্ম ডেলিভারির সম্ভবনা বাড়িয়ে দেয়। কিংবা অনেক সময় সি-সেকশন করে নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রিটার্ম ডেলিভারি করতে বাধ্য হতে হয়। সেক্ষত্রে অপরিণত বাচ্চা প্রসব হওয়ার সম্ভবনা থেকে যায়। অর্থাৎ, বাচ্চার দৈহিক গঠন সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই বাচ্চা প্রসব হয়। ফুসফুস, স্নায়ুতন্ত্রের গঠন অসম্পূর্ণ থাকতে পারে।

শিশুমৃত্যু –

অনিয়ন্ত্রিত গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসে ভুগলে,  মৃত শিশু প্রসব করার সম্ভবনা বেশি থাকে। এমনকি জন্মের পর শিশুমৃত্যুর হারও অনেকটাই বেশি।

বাচ্চার শ্বাসজনিত সমস্যা থাকে –

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের কারণে অপরিণত অবস্থায় জন্মানো বাচ্চার শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা দেখা যায় – যা রেসপিরেটরি ডিস্ট্রেস সিনড্রোম নামে পরিচিত।

অপত্য বাচ্চার রক্তে শর্করা কমে গিয়ে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে –

জন্মের পরে পরেই অপত্য বাচ্চার রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যেতে পারে। রক্তে শর্করার পরিমান অনেক কমে গেলে বাচ্চার খিঁচুনি হতে পারে।

অপুষ্টি –

অপত্য শিশু অপুষ্টিতে ভুগতে পারে। গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে অপত্য শিশুর শরীরে ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়ামসহ অন্যান্য খনিজের অভাব দেখা যায়। ফলে শিশুর সার্বিক বিকাশ ব্যাহত হতে পারে।

জন্ডিস

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসে ভোগা মায়ের শিশু জন্মের পরেই জন্ডিসে আক্রান্ত হতে পারে।

পরবর্তীকালে ওবেসিটি ও টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি –

যে সমস্ত মা গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসে ভোগেন, সাধারণত তাঁদের বাচ্চা পরবর্তীকালে ওবেসিটির শিকার হন। সঙ্গে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভবনাও অনেকটাই বেশি থাকে।

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মায়ের ঝুঁকি কতটা?

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মায়ের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত ঝুঁকিগুলি থাকে –

  • সি-সেকশন করে বাচ্চা প্রসব – গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে বাচ্চার আকার বড়ো হওয়ার কারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সি-সেকশন করে বাচ্চা প্রসব করাতে।
  • উচ্চ রক্তচাপ ও প্রিক্ল্যাম্পসিয়া – গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার সম্ভবনা অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়। সেই সঙ্গে প্রিক্ল্যাম্পসিয়া হওয়ার সম্ভবনা থাকে। প্রিক্ল্যাম্পসিয়ায় উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে সঙ্গে আরও অনেক শারীরিক সমস্যা যেমন হাত-পা ফুলে যাওয়া, মূত্রের মধ্যে প্রোটিন নির্গত হওয়া প্রভৃতি দেখা যেতে পারে। প্রিক্ল্যাম্পসিয়ায় অপত্য শিশু ও মা উভয়েরই জীবনহানির ঝুঁকি থাকে।
  • পরবর্তীকালে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যায় – গর্ভধারণের আগে ডায়াবেটিস না থাকা সত্ত্বেও গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে পরবর্তী গর্ভধারণেও ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভবনা থাকে। সেই সঙ্গে পরবর্তীকালে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভবনাও বেড়ে যায়।
আরও পড়ুন : 
(১) বিয়ের আগে কোন মেডিকেল টেস্ট জরুরী
(২) মাসিকের ব্যথা কমানোর জন্য কী করবেন?

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসে কী করণীয়?

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যতটা না চিকিৎসার প্রয়োজন তার থেকেও বেশি প্রয়োজন একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার। এক্ষেত্রে বলা যায় নিয়মিত ব্যায়াম এবং উপযুক্ত খাদ্যাভ্যাস আপনার চিকিৎসকের কাজকে সহজতর করে দেয়। গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসে কী করণীয় জানা থাকলে গর্ভবতী মা এবং তাঁর সন্তানের ঝুঁকি অনেকটাই কমানো যেতে পারে –

১) গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস থাকা প্রসূতি মার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাসে তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হবে। এমন খাবার খেতে হবে যা কম ক্যালোরিযুক্ত। অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার দিকে বিশেষ যত্নবান হতে হবে। ফলমূল, শাকসবজি, প্রোটিন এবং আঁশযুক্ত খাবার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় বেশি করে রাখতে হবে।

২) নিয়মিত এবং রুটিন অনুযায়ী সময়ে খাবেন। দিনে তিনবার ভারী খাবার এবং মাঝে হালকা খাবার খাবেন। কোনো খাবার স্কিপ করে পেট খালি রাখবেন না।

৩) চিনিযুক্ত খাবার একদম খাবেন না, এটা কখনই বলবো না। তবে বেশি চিনিযুক্ত খাবার বা পানীয় এড়িয়ে চলুন। যেমন, কোল্ড ড্রিংকস, মিষ্টি কেক বা বিস্কুটকে ফল, সবজি বা বাদাম দিয়ে স্থানান্তরিত করুন।

৪) অ্যালকোহল, ধূমপান একদম এড়িয়ে চলুন।

৫) নিয়মিত অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম বা শরীরচর্চা এবং যোগা করুন। হাঁটাহাঁটিও করতে পারেন। শরীর সচল থাকলে অর্থাৎ ঘাম বের হলে রক্তে শর্করার মাত্রা কমার সম্ভবনা বাড়ে।

৬) উপরে উল্লেখিত নিয়মগুলো মানার সঙ্গে সঙ্গে নিয়মিত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা অবশ্য-কর্তব্য। রক্তে শর্করার পরিমান জানার জন্য চিকিৎসকের কথা মতো নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত। মনে রাখবেন, গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় একটা বিষয়।

৭) খাদ্যাভ্যাস ও শরীরচর্চার মাধ্যমে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না এলে, চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ইনসুলিন নিতে হবে এবং অন্যান্য মেডিকেশনে থাকতে হবে।

৮) গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসে গর্ভের মধ্যে বাচ্চার বেড়ে ওঠার দিকেও তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হবে। প্রয়োজনে বারংবার আল্ট্রাসোনোগ্রাফি ও বিভিন্ন পরীক্ষা করার মাধ্যমে চিকিৎসক গর্ভস্থ বাচ্চার বেড়ে ওঠা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা তৈরি করে নেবেন। প্রয়োজনে নির্ধারিত তারিখের আগেই বাচ্চার প্রসব করাতে হতে পারে। নির্ধারিত তারিখের পর প্রসবের ক্ষেত্রে মা এবং বাচ্চার জন্য ঝুঁকির সৃষ্টি করে।

তবে মনে রাখবেন, গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হওয়া একটি সাধারণ এবং স্বাভাবিক বিষয়। উপেক্ষা যেমন করবেন না, তেমনি খুব বেশি ভয় পেয়ে অযথা বিচলিত হওয়ারও দরকার নেই। সতর্কতা, নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও উপযুক্ত ব্যবস্থাপনায় সহজেই এই সমস্যার মোকাবিলা করা সম্ভব। চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থেকে ওপরে উল্লেখিত পরামর্শগুলি মেনে চললে, ন্যূনতম সমস্যাও সৃষ্টি হয় না।

সুস্থ থাকুন, আনন্দে থাকুন।


ভালোবাসা ছড়িয়ে দিন

This Post Has 12 Comments

মন্তব্য করুন