Table of Contents
● কোলেস্টেরল কী?
কোলেস্টেরল একপ্রকার মোমজাতীয় ফ্যাট যা আমাদের প্রতিটি কোশে থাকে। রক্তের মাধ্যমে এটি দেহের বিভিন্ন অংশে প্রবাহিত হয়। সাধারণভাবে আমাদের শরীরের রাসায়নিক কারখানা যকৃতে বেশ কিছু রাসায়নিক ধাপ অতিক্রম করে কোলেস্টেরল তৈরি হয়। একজন প্রাপ্তবয়ষ্ক মানুষের শরীরে প্রতিদিন প্রায় ১ গ্রাম কোলেস্টেরল তৈরি হয়। তাছাড়া বিভিন্ন প্রকার খাদ্য যেমন মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, মাখন প্রভৃতির মধ্যেও কোলেস্টেরল থাকে, যা আমাদের চাহিদা পূরণ করে।
সাধারণভাবে নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত কোলেস্টেরল আমাদের শরীরের জন্য খারাপ তো নয়ই, বরং অপরিহার্য একটি উপাদান। কোশপ্রাচীর তৈরি, মস্তিষ্ক, ত্বক ও বিভিন্ন অঙ্গের গুরুত্বপূর্ণ কাজ সুষ্ঠ ভাবে পরিচালনা করা, ভিটামিন ও হরমোন তৈরির মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে কোলেস্টেরলের ভূমিকা আছে।
তবে, রক্তে উপস্থিত কোলেস্টেরলের মাত্রা অনেক বেশি হলে হৃৎপিন্ডের অনেক সমস্যা, এমনকি হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকও হতে পারে। তাই কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই প্রয়োজনীয়। এক্ষেত্রে পরিবর্তন করতে হবে আপনার খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রা।
■ কোলেস্টেরলের প্রকারভেদ :
কোলেস্টেরল রক্তের মধ্যে থেকে একা একা শরীরের বিভিন্ন প্রান্তে বা সারা দেহে ছড়িয়ে যেতে পারে না। রক্তবাহের মাধ্যমে সারা দেহে ছড়িয়ে যাওয়ার জন্য কোলেস্টেরল প্রোটিনের সঙ্গে যুক্ত হয়। কোলেস্টেরলযুক্ত এই প্রোটিনকে লাইপোপ্রোটিন (Lipoprotein) বলা হয়।
লাইপোপ্রোটিনের ওপর ভিত্তি করে কোলেস্টেরল প্রধানত দুই প্রকার –
LDL (Low-density lipoprotein) কোলেস্টেরল বা খারাপ কোলেস্টেরল (Bad Cholesterol), যা যকৃত থেকে রক্তবাহের মধ্যে কোলেস্টেরলকে নিয়ে যায়। এই LDL কোলেস্টেরল রক্তবাহের গায়ে আটকে যেতে পারে। ফলে রক্তবাহের ব্যাস সরু হয়ে যায়। রক্তবাহে বা হার্টে ব্লকেজ সৃষ্টি হওয়ার প্রধান কারণ রক্তে LDL কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি হওয়া।
HDL (High-density lipoprotein) কোলেস্টেরল বা ভালো কোলেস্টেরল (Good Cholesterol) যা কোলেস্টেরলকে পুনরায় শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে যকৃতে ফেরত আনে। যকৃত এই HDL কোলেস্টেরলকে ভেঙে ফেলে।
★ আরও একধরনের কোলেস্টেরল আছে যা VLDL (Very low-density lipoprotein) কোলেস্টেরল নামে পরিচিত। এটি প্রধানত ট্রাইগ্লিসারাইড দিয়েই তৈরি। যকৃত থেকে উৎপন্ন হয়ে এটি রক্তের মাধ্যমে কোশে কোশে পৌঁছে যায়। রক্তে VLDL কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়লেও ব্লকেজ তৈরির সম্ভবনা বেড়ে যায়।

● কোলেস্টেরল বাড়ে কেন?
কোলেস্টেরল বাড়ার অন্যতম প্রধান কারণ হল অনিয়ন্ত্রিত এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা। যেমন –
- অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস – বেশি পরিমাণে ফ্যাটজাতীয় খাদ্যগ্রহণ রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়। কোল্ড ড্রিংকস, স্যাচুরেটেড ফ্যাট (মাংস, দুগ্ধজাত খাদ্য, চকোলেট প্রভৃতি) এবং ট্রান্স-ফ্যাট (কুকিজ, ক্রাকার, পপকর্নজাতীয় কিছু ভাজা ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যে ব্যবহৃত তেল) জাতীয় খাদ্য গ্রহণের ফলে LDL কোলেস্টেরল বা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা রক্তের মধ্যে বাড়ে এবং HDL কোলেস্টেরল বা ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে।
- ওবেসিটি বা ওজনবৃদ্ধি – অতিরিক্ত ওজন রক্তে LDL কোলেস্টেরল বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। ৩০ বা তার অধিক BMI হলে, রক্তে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যায়।
- শারীরিক শ্রম বা কসরত না করা – বর্তমান সময়ে অনেকেই ডেস্ক জবে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। কিন্তু শারীরিক শ্রম যাঁদের করতে হয় না কিংবা যাঁরা ডেস্কে বসে বসেই কাজ করেন, তাঁদের রক্তে HDL বা ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমতে থাকে এবং LDL বা খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়তে থাকে। আবার উত্তর-আধুনিক ব্যস্ততায় শারীরিক কসরত, দৌড়-ঝাঁপ, সাঁতার, যোগ-ব্যায়াম না করার কারণে অনেকেরই অনেক কম বয়সেই কোলেস্টেরলের সমস্যা দেখা যাচ্ছে।
- ধূমপান – ধূমপান করার কারণে রক্তে HDL বা ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে, বিশেষত মহিলাদের ক্ষেত্রে এটি লক্ষ্য করা যায়। এই একই কারণে LDL বা খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণও বাড়ে।
তাছাড়া, বেশ কিছু ক্ষেত্রে জেনেটিক বা বংশগত কারণেও কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পেতে পারে। ফ্যামিলিয়াল হাইপারকোলেস্টেরলেমিয়া (Familial hypercholesterolemia) এমনই একটি জেনেটিক সমস্যা যাতে অনিয়ন্ত্রিত কোলেস্টেরলের সমস্যা সৃষ্টি হয়।
তাছাড়া বেশ কিছু অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণে এবং কিছু ওষুধ খাবার ফলেও রক্তে LDL কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পায়।
বয়সবৃদ্ধির সাথে সাথে অনিয়ন্ত্রিত কোলেস্টেরলের সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভবনাও বেড়ে যায়।
আরও পড়ুন : (১) সাইকেল চালানোর উপকারিতা (২) খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
● কোলেস্টেরল বাড়ার লক্ষণ :
কোলেস্টেরল বাড়া অর্থে সাধারণত রক্তে LDL কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যাওয়াকেই বোঝায়। এই LDL কোলেস্টেরল বাড়ার সুস্পষ্ট কোনো লক্ষণ সাধারণভাবে দেখা যায় না। হঠাৎ করেই হার্টের বড়ো কোনো সমস্যা ধরা পড়লে, তবেই অনিয়ন্ত্রিত কোলেস্টেরল সম্পর্কে জানা যায়।
সাধারণত রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেই জানা যায়, আপনার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে আছে কি না। ২৫ বছর বয়সের পর থেকেই ৫-৬ বছর অন্তর, এবং ৫০ বছরের পর থেকে প্রতি ২ বছর অন্তর রক্ত পরীক্ষা করে কোলেস্টেরলের মাত্রা দেখে নেওয়া উচিত। অনিয়ন্ত্রিত কোলেস্টেরল বা হৃদরোগ সম্পর্কিত পারিবারিক কোনো ইতিহাস থাকলে, আপনার ডাক্তার আপনাকে আরও ঘন ঘন কোলেস্টেরল পরীক্ষা করার নির্দেশ দিতে পারেন।
কিংবা, নিম্নলিখিত রিস্ক ফ্যাক্টরগুলো বর্তমান থাকলেও নির্দিষ্ট সময় অন্তর কোলেস্টেরল পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত –
- উচ্চ রক্তচাপ
- অতিরিক্ত ওজনবৃদ্ধি
- টাইপ-২ ডায়াবেটিস
- নিয়মিত ধূমপানের অভ্যাস
- শারীরিক কসরত না করা
জেনে নিন – হঠাৎ করেই মোটা হয়ে যাচ্ছেন? জেনে নিন মোটা হওয়ার বা ওজন বৃদ্ধির কারণ
সাধারণত “লিপিড প্রোফাইল” নামক রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা পরিমাপ করা হয়।
● রক্তে কোলেস্টেরলের স্বাভাবিক মাত্রা :
“লিপিড প্রোফাইল” নামক রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ মাপা হয়। এই পরীক্ষায় প্রতি ডেসিলিটার রক্তে কত মিলিগ্রাম মোট কোলেস্টেরল, LDL কোলেস্টেরল, HDL কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড আছে তা মাপা হয়।
মোট কোলেস্টেরলের পরিমাণ 200 mg/dl-এর কম হলে স্বাভাবিক ধরা হয়। মোট কোলেস্টেরলের পরিমান 200 mg/dl থেকে 239 mg/dl হলে ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয় এবং 240 mg/dl এর বেশি হলে অত্যধিক ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয়ে থাকে।
LDL কোলেস্টেরলের পরিমাণ 70 mg/dl থেকে 130 mg/dl এর মধ্যে থাকলে স্বাভাবিক ধরা হয়। LDL কোলেস্টেরলের পরিমাণ যত কম হবে তত ভালো এবং যত বেশি হবে তত বেশি ক্ষতিকর।
HDL কোলেস্টেরলের স্বাভাবিক পরিমাণ 40 mg/dl থেকে 60 mg/dl এবং এর পরিমাণ যত বেশি হয় ততই ভালো বলা হয়ে থাকে। HDL কোলেস্টেরলের পরিমাণ 40 mg/dl এর কম হলে খারাপ এবং 60 mg/dl এর বেশি হলে ভালো হিসাবে ধরা হয়।
ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমাণ 10 mg/dl থেকে 150 mg/dl হলে স্বাভাবিক বলা হয়। ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমাণ যত কম হয়, ততই ভালো।
যদিও কোলেস্টেরলের স্বাভাবিক মাত্রা বয়স, পারিবারিক ইতিহাস, আপনার জীবনযাত্রা এবং আরও কিছু ফ্যাক্টরের ওপর নির্ভর করে। সাধারণভাবে কম LDL কোলেস্টেরল এবং বেশি HDL কোলেস্টেরল থাকাকে হৃৎপিন্ডের জন্য ভালো হিসাবে ধরা হয়। রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমাণ বেশি হলেও হৃদরোগের সম্ভবনা বেড়ে যায়।
● কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখবেন কীভাবে?
অনিয়ন্ত্রিত কোলেস্টেরল আপনার বিপদের সম্ভবনা অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা আশু প্রয়োজন। ডাক্তার ও ওষুধের সাহায্য ছাড়াও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে আপনার খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রায় বেশ কিছুটা পরিবর্তন আনতে হবে।
◆ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে পরিবর্তন করুন খাদ্যাভ্যাস :
আমাদের দেহে খারাপ কোলেস্টেরল তথা LDL কোলেস্টেরল বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে অনিয়ন্ত্রিত ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস একটি বড়ো কারণ। অস্বাস্থ্যকর খাদ্যগ্রহণের ফলে রক্তে LDL কোলেস্টেরল বা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ে এবং ভালো কোলেস্টেরল বা HDL কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়। রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে তা কমানো অনেকটাই জটিল। তাই কোলেস্টেরলের সমস্যা যাঁদের আছে, তাঁদের ক্ষেত্রে খাদ্যগ্রহণে একটু বেশি সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
স্যাচুরেটেড ফ্যাট খাওয়া কমান – স্যাচুরেটেড ফ্যাট রক্তে মোট কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়। এই স্যাচুরেটেড ফ্যাট সাধারণত রেড মিট (খাসির মাংস, গরুর মাংস প্রভৃতি) এবং দুগ্ধজাত খাদ্যে পাওয়া যায়। তাই খাদ্যতালিকা থেকে এগুলিকে বাদ দিতে হবে। স্যাচুরেটেড ফ্যাট কম গ্রহণের ফলে রক্তে LDL কোলেস্টেরল তথা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে।
ট্রান্স-ফ্যাট খাওয়া বন্ধ করুন – কুকিজ, ক্রাকার, কেক প্রভৃতি প্যাকেটজাত ভাজা দ্রব্যে যে তেল ব্যবহার করা হয়, তাতে ট্রান্স-ফ্যাট থাকে। এই সব খাবারের প্যাকেটে সাধারণত “Partially hydrogenated vegetable oil” ব্যবহার করা হয়েছে, এই মর্মে লেখা থাকে। এই ট্রান্স-ফ্যাট গ্রহণের ফলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। তাই কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে ট্রান্স-ফ্যাটযুক্ত এই জাতীয় খাবার খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়া উচিত।
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত খাবার গ্রহণ করুন – ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড LDL কোলেস্টেরল তথা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায় না। বরং এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, এবং হৃৎপিন্ডকে সুস্থ রাখতেও সদর্থক ভূমিকা নেয়। তাই রেড মিটের পরিবর্তে খাদ্যতালিকায় ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত সামুদ্রিক মাছ এবং বড়ো আকারের মাছ যোগ করুন। আখরোট, শণ বীজ প্রভৃতিতেও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে।
দ্রাব্য আঁশ বা সল্যুবেল ফাইবারযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করুন – দ্রাব্য আঁশ বা সল্যুবেল ফাইবার (Soluble Fat বা Diatery Fat) রক্তের কোলেস্টেরল গ্রহণ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ফলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সল্যুবেল ফাইবারযুক্ত খাবার, যেমন – ওটস্, বার্লি, বাদাম, মটরশুটি, মুসুর ডাল, গাজর, আপেল, পেয়ারাসহ বেশ কিছু ফল ও সবজি খাদ্যতালিকায় অবশ্যই রাখতে হবে।
◆ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে পরিবর্তন করুন জীবনযাত্রা :
শুধুমাত্র খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন বা ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন মতো ঔষধ সেবন কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের জন্য যথেষ্ট নয়। কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে আপনার দৈনন্দিন জীবনযাত্রাতেও বেশ কিছু পরিবর্তন আনতে হবে।
শরীরচর্চা বা শারীরিক কসরত – কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে শরীরচর্চা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। অল্প থেকে মাঝারি শরীরচর্চা বা শারীরিক কসরত রক্তে HDL কোলেস্টেরল বা ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে এবং LDL কোলেস্টেরল বা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। সপ্তাহে অন্তত পাঁচদিন ৩০ মিনিটের শরীরচর্চা আপনার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য বেশ কিছু শারীরিক সমস্যার ক্ষেত্রেও বিশেষ কার্যকরী। তাছাড়া শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম তথা প্রাণায়াম কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে যেমন ভূমিকা নেয়, তেমনি আপনার হৃৎপিন্ডের স্বাস্থ্যের জন্যও বিশেষ উপযোগী।
তাছাড়া কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে দৈনন্দিন জীবনযাত্রাতেও বেশ কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। যেমন –
- কাজের ফাঁকে অবসর সময়ে হাঁটাহাঁটি করা,
- স্বল্প দূরত্বের পথ হেঁটেই চলে যাওয়া,
- অফিস বা বাজারে যাওয়ার জন্য সাইকেল ব্যবহার করা,
- সপ্তাহান্তে বা সময়-সুযোগ থাকলে পছন্দের কোনো খেলায় যোগ দেওয়া ইত্যাদি।
ধূমপান ত্যাগ করুন – নিয়মিত ধূমপান আপনার রক্তে ভালো কোলেস্টেরল বা HDL কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয় এবং হৃদরোগ ডেকে আনে। তাই এখুনি ধূমপান ত্যাগ করুন। ধূমপান ত্যাগ করলে রক্তে HDL কোলেস্টেরল তথা ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, ধূমপান ত্যাগের তিনমাস পর থেকেই আপনার ফুসফুস, হৃৎপিন্ড এবং রক্ত সংবহন তন্ত্র ক্রমশ পুরানো ছন্দে ফিরতে শুরু করে। ধূমপান ত্যাগের এক বছর পরে আপনার হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় সম্ভবনা পূর্বের তুলনায় অর্ধেক হয়ে যায়।
ওজন কমান – অতিরিক্ত ওজন বা ওজন বৃদ্ধির অর্থ শরীরে তথা রক্ত সংবহন তান্ত্রে ফ্যাট বা মেদের আধিক্য। ওজনবৃদ্ধির ফলে রক্তে LDL কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ে, এবং HDL কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে। তাই রক্তে LDL এবং HDL কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে আপনাকে নিজের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতেই হবে।
অনিয়ন্ত্রিত কোলেস্টেরল আপনার জন্য হৃদযন্ত্র বিকল হওয়ার মতো সমস্যা ডেকে আনে। এমনকি স্ট্রোকও হতে পারে। তাই কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সচেষ্ট হওয়া আশু প্রয়োজন। কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে আপনার খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন হয়তো আপনাকে আরও অনেক জটিলতা থেকেও মুক্তি দেবে।
সুস্থ থাকুন, আনন্দে থাকুন।
Pingback: সুপার ফুড 'সজিনা পাতা' – জেনে নিন সজিনা পাতার অত্যাশ্চর্য সব উপকারিতা
Khub sundor informative, upokrito holam.
Erokom aro Lekha chai.
অনেক ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান মতামতের জন্য।
আমাদের ব্লগ নিয়মিত ফলো করুন, আরও অন্যান্য বিষয়ে সহজ বাংলায় আলোচনার চেষ্টা আমাদের থাকবে।
Pingback: বিয়ের আগে কী কী মেডিকেল টেস্ট জরুরী? জেনে নিন এখনই।
Pingback: হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপের কারণ - শরীর ও স্বাস্থ্য
Pingback: সাইকেল চালানোর উপকারিতা | সাইক্লিং করার উপকারিতা - শরীর ও স্বাস্থ্য
Pingback: উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কী করবেন? | উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায়।
Pingback: গান শোনার উপকারিতা | গান শোনার ৮টি উপকারিতা
Pingback: ওজন বাড়ানোর জন্য কী কী খাবেন? | ওজন বাড়ানোর জন্য খান এই ১৫টি খাদ্য
Pingback: আলঝেইমার্স রোগের প্রাথমিক লক্ষণ | আলঝেইমার্স রোগের প্রাথমিক ১০টি উপসর্গ
Pingback: আদার উপকারিতা | জেনে নিন, আদা খাওয়ার ১০টি উপকারিতা
Pingback: কাঁচা লঙ্কা খাওয়ার ১২টি উপকারিতা | কাঁচা লঙ্কার পুষ্টিগুণ
Pingback: কোল্ড ড্রিংকসের ক্ষতিকর দিক | কোল্ড ড্রিংকসের ১৫টি অপকারিতা
Pingback: বগলের কালো দাগ দূর করার উপায় | বগলের কালো দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায়
Pingback: মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার কারণ কী? | মাথা ঘোরার বিভিন্ন কারণ
Pingback: পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা | পেয়ারার পুষ্টিগুণ ও পেয়ারার উপকারিতা
Pingback: তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা | তরমুজ খাওয়ার ৮ টি উপকারিতা
Pingback: তরমুজের উপকারিতা | তরমুজ খাওয়ার ৮ টি উপকারিতা