You are currently viewing ওজন নিয়ে চিন্তিত? রইল ওজন কমানো-র কিছু কার্যকরী উপায়
ওজন কমানোর কিছু কার্যকরী উপায়

ওজন নিয়ে চিন্তিত? রইল ওজন কমানো-র কিছু কার্যকরী উপায়

ভালোবাসা ছড়িয়ে দিন

ওজন নিয়ে চিন্তিত? ওজন কমানো-র কথা ভাবছেন? নতুন বছর বা জন্মদিনের রেজুলেশনের কথা মনে আছে? সেদিন ভেবেছিলেন না, এবার ওজনটা নিয়ন্ত্রণে আনবেনই! ঝরিয়ে ফেলবেন মেদ, কমিয়ে ফেলবেন ওজন! কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর হয়ে ওঠে নি, তাই না? তবে অসুবিধা নেই, আপনাদের জন্যই ওজন কমানো-র বেশ কিছু কার্যকরী উপায় বা পরামর্শ নিয়ে হাজির হয়েছি আমরা।

মনে রাখবেন, মেদ ঝরিয়ে ওজন কমানো আপনার পক্ষে কোনো শক্ত কাজ নয়। আপনি অনায়াসেই তা পারবেন – চাই শুধু একটু ধৈর্য এবং সচেতনতা। যে ওজনটা দিনের পর দিন, মাসের পর মাস অল্প অল্প করে বেড়েছে, তা রাতারাতি কমে যাবে, এটা আশা করবেন না। তবে ওজন বৃদ্ধির কারণগুলি বুঝে সঠিক পন্থা অবলম্বন করলে, ওজন সহজেই কমিয়ে ফেলতে পারবেন – এটা প্রমাণিত সত্য।

১) ওজন কমানো-র জন্য কী খাবেন, তার তালিকা বানান –

ওজন কমানো-র প্রাথমিক শর্ত হল নিয়মানুবর্তিতা ও সময়ানুবর্তিতা। কখন কখন খাবেন এবং কী কী খাবেন তার একটি তালিকা বানিয়ে নিন। তালিকাটি এমনভাবে বানান যাতে খুব কঠিন মনে না হয়। রাতারাতি ভাত-রুটি বাদ দিয়ে ওটস্ খেলে প্রাথমিক ভাবে আপনার ওজন হয়তো কমবে, কিন্তু ওই ডায়েট আপনি কতদিন টানতে পারবেন সন্দেহ আছে। সেক্ষেত্রে হীতে-বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই সুষম খাবার দিয়ে ডায়েট চার্ট এমনভাবেই বানান যাতে আপনি সারাজীবন মেনে চলতে পারেন। প্লেটে খাবারের পরিমান কমিয়ে আনার সঙ্গে সঙ্গে দুটি মিলের মাঝের সময়টিও কমিয়ে আনুন। অল্প সময়ের ব্যবধানে অল্প অল্প খাওয়া, একেবারে অনেক খাওয়ার তুলনায় অনেক ভালো।

২) পেট খালি রাখবেন না –

তাড়াতাড়ি ওজন কমানো-র চক্করে সকালের ব্রেকফাস্ট বা অন্যকোনো সময়ের খাবার স্কিপ করবেন না। সকালে পর্যাপ্ত জলখাবার, দুপুরে পরিমিত মধ্যাহ্নভোজ ও রাতে সামান্য ডিনারের সঙ্গে সঙ্গে মাঝে খিদে পেলেই খাওয়ার জন্য ফল, ছোলা সেদ্ধ, ডিম সেদ্ধ, বাদাম হাতের কাছেই রাখুন। খিদে পাওয়ার আগেই খেলে মানুষ সাধারণত পরিমানে কম খায় এবং খুব খিদে পেলে পরিমানে অনেক বেশি খাওয়া হয়ে যায়। তাই অল্প সময়ের ব্যবধানে অল্প অল্প খান।

৩) সময় নিয়ে ধীরে ধীরে খান –

খাওয়ার সময় মোটেই তাড়াহুড়ো করবেন না। সময় নিয়ে ভালো করে চিবিয়ে খান। এতে হজম ভালো হবে। তাছাড়া, তাড়াহুড়ো করে খেলে আপনি প্রয়োজনের থেকে অনেক বেশি খাবার খেয়ে ফেলেন, যা ওজন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, খাওয়ার সময় পাকস্থলী ভর্তি হল কিনা সেই খবর মস্তিষ্কে পৌঁছাতেই প্রায় ২০ মিনিট লেগে যায়, ততক্ষণে আমরা অনেক অতিরিক্ত খেয়ে ফেলি। তাই আমাদের পরামর্শ সময় নিয়ে ধীরে ধীরে খান। আরও ভালো হয়, যদি আপনি আপনার বর্তমান খাবারের প্লেটটির পরিবর্তে ছোট প্লেট ব্যবহার করেন, তাহলে আপনি সাধারণত কম খাবেন।

৪) কিছু কিছু খাবারকে ‘না’ বলতে শিখুন –

ভাজাভুজি খাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে – শুধু বাড়িতেই না, বাড়ির বাইরেও। কোল্ড ড্রিংকস, প্যাকেটজাত চিপস্, চানাচুরের সঙ্গে সঙ্গে লুচি, পরোটা, পকোড়া, সিঙ্গারাকে ‘না’ বলতে শিখুন। যতটা সম্ভব জাঙ্কফুড ও চিনি থেকে দূরে থাকুন। ওজন কমাতে হলে মিষ্টি খাওয়া বন্ধ করতেই হবে। সেই সঙ্গে বাড়ির রান্নার দিকে খেয়াল রাখুন যাতে তেলের পরিমাণ কমানো যায়। তবে শুধু সিদ্ধ খাবার খাবেন না। বাঙালি রান্নায় ব্যবহৃত মশলা, যেমন – হলুদ, জিরে, মৌরি, ধনে কখনই খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দেবেন না। এইসব মশলা ওজন কমাতেও সাহায্য করে।

আরও পড়ুন – মোটা হওয়ার বা ওজন বৃদ্ধির কারণ

৫) পর্যাপ্ত জল পান করুন –

সারাদিন বিভিন্ন সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল পান করুন। আপনার ওজন যদি কম-বেশি ৬০ কেজি হয়, তবে দিনে অন্ততপক্ষে সাড়ে চার লিটার জল খেতে হবে। যাঁরা বেশি ঘামেন, তাঁরা আরও একটু বেশি জল পান করবেন। পর্যাপ্ত জলপান করলে আপনার দেহের অতিরিক্ত টক্সিন বের হতে সুবিধা হবে। তাছাড়া সকালে ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস ঈষদ-উষ্ণ জলে পাতিলেবুর রস ও মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে মেদ ঝরবে সহজেই। খাওয়ার আগে জল খাওয়ার চেষ্টা করুন, এতে আপনার ক্ষুধার মাত্রা কমে যাবে, এবং আপনি পরিমিত খাবেন।

৬) গ্রীন টি এবং কফি পান করুন –

গবেষণায় দেখা গেছে, কফি এবং গ্রীন টি-তে প্রচুর পরিমাণে কার্যকরী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা আমাদের মেটাবলিজম বাড়িয়ে দিয়ে ওজন ঠিক রাখতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন গ্রীন টি বা কফি পান করতে পারেন। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন অতিরিক্ত চিনি খাওয়া না হয়ে যায়।

৭) ডিনার হোক তাড়াতাড়ি –

যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডিনার করে নিন। রাত্রে শুতে যাওয়ার অন্তত এক-দু ঘন্টা আগে ডিনার শেষ করুন। কারণ, রাত্রে খাবার খেয়েই সঙ্গে সঙ্গে শুয়ে পড়লে মোটা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। তাই ডিনার হোক তাড়াতাড়ি।

৮) নিয়মিত কায়িক পরিশ্রম বা শরীরচর্চা করুন –

আপনি যদি ভাবেন শুধু ডায়েট করেই অর্থাৎ খাদ্যের পরিমান, খাদ্যগ্রহণের অভ্যাস পরিবর্তন করে কম ক্যালোরি গ্রহণ করার মাধ্যমেই ওজন কমিয়ে ফেলবেন, তবে ভুল ভাবছেন। এর সঙ্গেই চাই ক্যালোরি খরচ করার জন্য নিয়মিত শরীরচর্চা বা কায়িক পরিশ্রম। আপনার ব্যস্ত শিডিউলের মধ্যেও নিজের জন্য, নিজের শরীরের জন্য অল্প সময় বের করতেই হবে – তা সে সকালেই হোক বা বিকালে। দ্রুত হাঁটা, দৌড়ানো, স্কিপিং, সাইক্লিং, যোগা বা সাঁতার – যা খুশি, যে কোনো একটি বা একাধিক করতে পারেন। চাইলে উপযুক্ত ট্রেনারের তত্ত্বাবধানে জিমে যোগ দিতে পারেন। নিয়মিত ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘন্টার শরীরচর্চা আপনার ওজন কমানোর ক্ষেত্রে ভীষন কার্যকরী। আপনার ক্ষেত্রে যদি বাইরে বের হওয়ার বা মাঠে যাওয়ার সুযোগ না থাকে, তবে বাড়িতে ঘরের মধ্যেই জগিং করতে পারেন। তাছাড়া বাড়ির কাজ যেমন ঘর-দোর মোছা, ঝাঁট দেওয়ার মতো কায়িক শ্রমের কাজগুলি নিজেই করুন।

আপনার ওজন কমবেই, কারন আপনি আপনার ওজন নিয়ে সচেতন হয়ে উঠেছেন। আমাদের দেওয়া পরামর্শগুলি মেনে চলুন, সময়ের সাথে সাথে নিজের ক্রমোন্নতি নিজেই বুঝতে পারবেন। পরিবারের অন্যদেরও ওজন নিয়ে সচেতন করে তুলুন, তাতে আপনার নিজেরই সুবিধা হবে। আর কোনো প্রশ্ন বা সমস্যা থাকলে নির্দ্বিধায় কমেন্ট করে জানাবেন। আমরা সাধ্যমত আপনার সহযোগিতা করতে চেষ্টা করবো।

সুস্থ থাকুন, আনন্দে থাকুন।


ভালোবাসা ছড়িয়ে দিন

This Post Has 7 Comments

মন্তব্য করুন