উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ গুলি প্রাথমিক অবস্থায় সহজে বোঝা যায় না। অধিকাংশ মানুষই উচ্চ রক্তচাপের কোনো লক্ষণ বুঝতে পারেন না। সেই কারণে একে সাইলেন্ট কিলার (Silent killer)-ও বলা হয়ে থাকে। সঠিক সময়ে উচ্চ রক্তচাপ ধরা না পড়লে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপের কারণে হৃৎপিন্ড, রক্তবাহের ক্ষতি যেমন হয় তেমনি কিডনি, মস্তিষ্কসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গেরও ক্ষতি হয়।
বর্তমান সময়ে হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ একটি সাধারণ সমস্যায় পরিণত হয়েছে। উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ গুলি সম্পর্কে সচেতন না হওয়ার জন্য, এটি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মারাত্মক রূপ ধারণ করে আঘাত হানে। উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ গুলি সম্পর্কে সচেতন থাকলে তা অনেকক্ষেত্রেই এড়ানো সম্ভব। কিন্তু লক্ষণ গুলি খুব একটা প্রকট না হওয়ার জন্য, নিয়মিত রক্তচাপ মাপা-ই উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার অন্যতম উপায়।
হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ
উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ গুলি সহজে প্রকট না হলেও, নীচের লক্ষণগুলি দেখা গেলে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। রক্তচাপ মেপে উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
- মারাত্মক মাথাব্যথা,
- ক্লান্তি, স্বল্প পরিশ্রমেই ক্লান্ত হয়ে যাওয়া,
- দেখার সমস্যা সৃষ্টি হওয়া বা ঝাপসা দেখা,
- বুকে, ঘাড়ে ব্যথা অনুভব করা,
- বুক ধড়ফড় করা,
- শ্বাসকষ্ট হওয়া,
- অনিয়মিত হৃদস্পন্দন,
- মূত্রে রক্ত আসা ইত্যাদি।
– এই লক্ষণগুলির এক বা একাধিক থাকলে নিজের রক্তচাপ অবশ্যই পরীক্ষা করা উচিত। যত তাড়াতাড়ি উচ্চ রক্তচাপ শনাক্ত করা যাবে, তত ক্ষতির সম্ভবনা কম।
আরও পড়ুন – (১) গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস? জেনে নিন কী করণীয়। (২) বিয়ের আগে কী কী মেডিকেল টেস্ট জরুরি? (৩) মাতৃদুগ্ধের উপকারিতা
হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যা
উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যা-য় সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় হৃৎপিন্ড ও রক্তবাহ। এরই ফলস্বরূপ মস্তিষ্ক, কিডনি, চোখসহ বিভিন্ন অঙ্গেরও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যায়।
১) হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক – উচ্চ রক্তচাপের ফলে ধমনী তথা রক্তবাহের দেওয়াল পুরু ও শক্ত হয়ে যায়। একে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস বলে। রক্তবাহের ভিতরের দেওয়ালে পলি জমার মতো সৃষ্টি হয়। যা রক্তের সঙ্গে জমাট বেঁধে রক্তবাহ প্রবাহিত হয়। এর ফলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং অন্যান্য নানান অনভিপ্রেত জটিলতা সৃষ্টি হয়।
২) অ্যানিউরিজম (Aneurysm) – উচ্চ রক্তচাপের ফলে রক্তনালী দুর্বল ও স্ফীত হয়ে যায়। যা অ্যানিউরিজম (Aneurysm) নামে পরিচিত। এই দুর্বল ও স্ফীত রক্তনালী ফেটে গিয়ে রক্তক্ষরণ হলে পরিস্থিতি ভয়ংকর হতে পারে। এমনকি স্ট্রোক হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
৩) হার্ট ফেলিওর – রক্তনালীতে রক্তের উচ্চ রক্তচাপের কারণে হৃৎপিন্ডকে বেশি কাজ করতে হয়। অক্সিজেনের সরবরাহ নিশ্চিত করতে বেশি পাম্প করতে হয়। এর ফলে হৃৎপিন্ডের দেওয়াল ক্রমশ পুরু হয়ে যায় ও পেশিগুলির স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হতে থাকে। ফলে হার্ট ফেলিওরের সম্ভবনা বেড়ে যায়।
৪) বুকে ব্যাথা – উচ্চ রক্তচাপযুক্ত মানুষের হৃৎপিন্ডে পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পৌঁছানোর জন্য বুকে ব্যাথা হতে পারে। অতিরিক্ত দৌড়ঝাঁপ, সিঁড়িতে ওঠা-নামার সময় এই সমস্যা বেশি বোঝা যায়।
৫) কিডনির সমস্যা – উচ্চ রক্তচাপের ফলে কিডনির সরু সরু রাক্তনালিকা গুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রক্তনালিকা গুলি পুরু ও দুর্বল হয়ে যায়। তাছাড়া রক্তনালির ভিতরের পরিধিও কমে যায়। ফলে কিডনির স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়।
৬) চোখের সমস্যা – উচ্চ রক্তচাপের ফলে চোখের সরু রক্তজালিকা গুলির ভিতরের পরিধি আরও সরু হয়ে যায়। চোখের রেটিনায় অক্সিজেন সরবরাহে ঘাটতি দেখা যায়। ফলে চোখের দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পায়। তাছাড়া রক্তনালিতে ব্লক সৃষ্টি হয়ে অপটিক নার্ভে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হতে পারে। সেক্ষেত্রে দৃষ্টিশক্তি চলেও যেতে পারে।
৭) মেটাবলিক সিনড্রোম – উচ্চ রক্তচাপের ফলে দেহের স্বাভাবিক মেটাবলিজম বিঘ্নিত হয়। হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপের কারণে ট্রাইগ্লিসারাইড ও খারাপ কোলেস্টেরল (LDL)-এর পরিমাণ বাড়ে এবং ভালো কোলেস্টেরল (HDL)-এর পরিমাণ কমে। রক্তে ইনসুলিনের পরিমাণ বাড়াতেও উচ্চ রক্তচাপের পরোক্ষ ভূমিকা আছে। এই সব মেটাবলিক সিনড্রোমের ফলস্বরূপ ডায়াবেটিস, হৃৎপিন্ডের সমস্যা ও স্ট্রোক সৃষ্টি হয়।
আরও পড়ুন – কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে পরিবর্তন করুন খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রা
৮) স্মৃতিশক্তি বা বোধশক্তি হ্রাস পাওয়া – অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ চিন্তা করার ক্ষমতা, স্মৃতিশক্তি ও নতুন কিছু শেখার ক্ষমতাকে হ্রাস করে। স্মৃতিশক্তি হ্রাস পাওয়া ও নতুন কিছু বিষয় বুঝতে সমস্যা হওয়ার ঘটনা উচ্চ রক্তচাপযুক্ত অনেক প্রৌঢ় বা বৃদ্ধের মধ্যেই দেখা যায়।
৯) যৌন জীবনে সমস্যা – উচ্চ রক্তচাপ আপনার যৌন জীবনকেও প্রভাবিত করে। যৌন মিলনের ইচ্ছে হ্রাস পায়। তাছাড়া উচ্চ রক্তচাপের কারণে, পেনিস ও ভ্যাজাইনাতে রক্তপ্রবাহ কমে যাওয়ার ফলে যৌন মিলনের তৃপ্তিও হ্রাস পায়।
উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ ও সমস্যা গুলি থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার একমাত্র উপায় নিজের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা। এর জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধ নিতে হতে পারে। রক্তচাপ বৃদ্ধির কারণগুলি জানা থাকলে এই ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা হয়। সেই সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পরিবর্তন আনতে হবে আপনার জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসে।
Pingback: সাইকেল চালানোর উপকারিতা | সাইক্লিং করার উপকারিতা - শরীর ও স্বাস্থ্য
Pingback: সাইকেল চালানোর উপকারিতা | সাইক্লিং করার উপকারিতা - শরীর ও স্বাস্থ্য
Pingback: উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কী করবেন? | উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায়।
Pingback: সাইকেল চালানোর উপকারিতা | সাইক্লিং করার উপকারিতা - শরীর ও স্বাস্থ্য
Pingback: সাইকেল চালানোর উপকারিতা | সাইক্লিং করার উপকারিতা - শরীর ও স্বাস্থ্য
Pingback: মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার কারণ কী? | মাথা ঘোরার বিভিন্ন কারণ