You are currently viewing উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কী করবেন? | উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায়।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায়

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কী করবেন? | উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায়।

ভালোবাসা ছড়িয়ে দিন

উচ্চ রক্তচাপ এমন এক ‘সাইলেন্ট কিলার’ যে, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে অবশ্যই সচেষ্ট হওয়া উচিত। অন্যথায় মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু বর্তমান সময়ে অনেক মানুষই উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন। অনেকে এই ব্যাপারে অবগত, আবার অনেকে জানেনই না তিনি এই সাইলেন্ট কিলার উচ্চ রক্তচাপের শিকার। প্রাথমিক অবস্থায় এর লক্ষণগুলি প্রকট নয় বলেই, অনেকে উচ্চ রক্তচাপকে অবহেলা করেন। তাই হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের মতন প্রাণঘাতী ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়।

অথচ উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ ও উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যাগুলি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকলে প্রাথমিক অবস্থাতেই ব্যবস্থা নেওয়া যায়। হাইপারটেনশন বা রক্তচাপ বৃদ্ধির কারণগুলিকে দূর করার জন্য সচেষ্ট হওয়া যায়। তবে উচ্চ রক্তচাপ অনেকাংশে জীবনশৈলী জনিত সমস্যা বলে, জীবনশৈলীর পরিবর্তনের মাধ্যমেই এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের তেমনি কিছু উপায় নিয়ে আজ কথা বলবো –

Table of Contents

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত শরীরচর্চা করুন

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায়গুলির মধ্যে অন্যতম হল নিয়মিত শরীরচর্চা করা। নিয়মিত শরীরচর্চা আপনার হার্টকে শক্তিশালী ও কার্যকরী করে তোলে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতি সপ্তাহে ১৫০ মিনিট দ্রুত হাঁটাহাঁটি অথবা ৭৫ মিনিট দৌড়ানো আবশ্যিক। এক্ষেত্রে আপনার উচ্চ রক্তচাপ ৫ থেকে ৮ mm Hg কমতে পারে। তবে শরীরচর্চা নিয়মিত করতে হবে। অন্যথায় শরীরচর্চা বন্ধ করলে পুনরায় রক্তচাপ বৃদ্ধি পাবে।

দ্রুত হাঁটাহাঁটি বা দৌড়ানো ছাড়াও যে কোনো শারীরিক কসরত উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাঁতার কাটা, ফুটবল খেলার মতো শারীরিক দক্ষতাপূর্ণ খেলাগুলিতে অংশগ্রহণ করা, সাইকেল চালানোর উপকারিতাও অনেক।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিজের অতিরিক্ত ওজন কমান

নিজের দেহের ওজনবৃদ্ধি উচ্চ রক্তচাপের অন্যতম একটি কারণ। তাছাড়া ওজনবৃদ্ধি বা মোটা হওয়ার কারণে নাক ডাকা বা স্লিপ অ্যাপনিয়ার সমস্যা সৃষ্টি হয়। যা রক্তচাপ বৃদ্ধির আরও একটি কারণ। তাই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য অতিরিক্ত ওজন কমানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ রক্তচাপযুক্ত মানুষের অতিরিক্ত ওজন কমানোর ফলে রক্তচাপ যথেষ্ট পরিমাণে কমে। প্রতি ১৭.৬৪ পাউন্ড (প্রায় ৮ কেজি) ওজন হ্রাসে সিস্টোলিক রক্তচাপ ৮.৫ mm Hg এবং ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ ৬.৫ mm Hg কমতে পারে। এই ওজনহ্রাস শরীরচর্চার মাধ্যমে হলে এর ফলাফল আরও ভালো হয়।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোডিয়াম কম এবং পটাশিয়াম বেশি খান

অতিরিক্ত সোডিয়াম হৃৎপিন্ডের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। ডায়েটের মাধ্যমে সোডিয়াম কম গ্রহণ করার ফলে হৃৎপিন্ডের সার্বিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং রক্তচাপ কমে। আবার উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধিতে সোডিয়ামের যা প্রভাব, তা কমাতে সাহায্য করে পটাশিয়াম।

তাই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কম সোডিয়াম ও বেশি পটাশিয়ামযুক্ত খাবার গ্রহণের কথা বলা হয়। খাদ্যের মাধ্যমে লবন খাওয়ার পরিমাণ কমাতে হবে। প্যাকেটজাত বা প্রক্রিয়াজাত খাবার কম খেতে হবে এবং সবুজ শাকসবজি, ফল, মাছ, দুধ, দানাশস্য বেশি খেতে হবে। তবে কিডনির সমস্যা থাকলে পটাশিয়াম বেশি খাওয়া ঠিক নয়। প্রয়োজনে পুষ্টিবিদ বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে চিনি এবং রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট কম খান

চিনি ও রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেটের সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপের সম্পর্ক রয়েছে। দেখা গেছে, যে সমস্ত মানুষ নিয়মিত কোল্ড ড্রিঙ্কস খান, তাঁদের রক্তচাপ যাঁরা কোল্ড ড্রিঙ্কস খান না, তাঁদের তুলনায় বেশি। আবার যাঁরা কার্বোহাইড্রেট-ফ্রি ডায়েটে থাকেন, তাঁদের উচ্চ রক্তচাপ উল্লেখযোগ্য ভাবে কমতেও লক্ষ্য করা গেছে। তাই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট বিশেষত চিনি কম খেতে হবে।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রোটিন যুক্ত স্বাস্থ্যকর খাবার খান

এক গবেষণায় দেখা গেছে, যে সমস্ত মানুষ বেশি প্রোটিন জাতীয় খাদ্যগ্রহণ করেন, তাঁদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা কম হয়। যাঁরা প্রতিদিন গড়ে ১০০ গ্রাম প্রোটিন খান, তাঁদের ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা হওয়ার সম্ভবনা অন্যদের তুলনায় ৪০% কম থাকে। প্রোটিনের সঙ্গে ফাইবারজাতীয় খাদ্য গ্রহণে সেই সম্ভবনা ৬০% পর্যন্ত কম থাকে। মাছ, মাংস, ডিম, বাদাম, বিনস প্রভৃতিতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে।

তবে বেশি প্রোটিনযুক্ত খাদ্য সবার খাওয়া উচিত নয়। যেমন – কিডনির সমস্যা থাকলে বেশি প্রোটিন খাওয়া উচিত নয়। প্রয়োজনে নিজের চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলা দরকার।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন

আমরা খাদ্যের মাধ্যমে যে লবন তথা সোডিয়াম গ্রহন করি, তার অধিকাংশই আসে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য থেকে। অধিকাংশ লো-ফ্যাট খাদ্যেই লবন ও চিনির পরিমাণ বেশি থাকে।

প্রক্রিয়াজাত খাদ্য কম খাওয়া বা একদম বন্ধ করলে, আপনি স্বাভাবিক ভাবেই কম লবন, কম চিনি ও কম রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করবেন। ফলে আপনার উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সুবিধা হবে।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে মদ্যপান কমান

অতিরিক্ত মদ্যপান রক্তচাপ বৃদ্ধি করে। তথ্য বলছে, সারা বিশ্বের সমস্ত উচ্চ রক্তচাপযুক্ত মানুষদের মধ্যে ১৬% মদ্যপান করে থাকেন। এমন কি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য যে ওষুধ নেওয়া হয়, তার কার্যকারিতাও মদ্যপানের কারণে হ্রাস পায়। তাই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে মদ্যপান ত্যাগ করতে হবে।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ধূমপান ত্যাগ করুন

সিগারেট বা বিড়িতে দেওয়া প্রতিটি টান আপনার রক্তচাপ তাৎক্ষণিক ভাবে অল্প অল্প করে বাড়ায়। ধূমপান করার পর বেশ কিছুক্ষণ সময় লাগে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে। তামাকে থাকা রাসায়নিকগুলি রক্তবাহ ও হৃৎপিন্ডের মারাত্মক ক্ষতি করে। রক্তবাহের স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হয়, রক্তবাহ সরু হয়ে যায়। ফলে হৃপিন্ডের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়।

তাই ধূমপান ত্যাগ করলে হৃৎপিন্ডের স্বাস্থ্য ভালো থাকার সঙ্গে সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। যে সমস্ত মানুষ ধূমপান ছাড়তে পেরেছেন, তাঁরা ধূমপায়ীদের তুলনায় বেশি দিন বাঁচেন।

আরও পড়ুন -
১) বিয়ের আগে কী কী মেেডিকেল টেস্ট জরুরি
২) কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায়
৩) বগলের কালো দাগ দূর করার ১২টি ঘরোয়া উপায়

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ক্যাফিনযুক্ত খাবার কম খান

বেশ কিছু গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, ক্যাফিন রক্তচাপ বৃদ্ধি করে। তবে ব্যক্তিবিশেষে এর প্রভাব ভিন্ন ভিন্ন। সাধারণত কফি খাওয়ার ঠিক পরে রক্তচাপ সামান্য বৃদ্ধি পায়। তবে ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘন্টার মধ্যে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে দেখা যায়।

যাঁরা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এর প্রভাব আরও বেশি দেখা যায়। আবার কেউ কেউ অন্যদের তুলনায় ক্যাফিনে বেশি সেনসিটিভ। তাঁদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ক্যাফিন বর্জন করা বা কম খাওয়া উচিত।

যদিও উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টিতে ক্যাফিনের ভূমিকা নিয়ে গবেষণার যথেষ্ট অবকাশ আছে।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে অল্প পরিমাণে ডার্ক চকলেট খেতে পারেন

হেডিং পড়েই খুব মজা লাগছে, তাই না? হ্যাঁ, আপনি যদি চকোলেট প্রেমী হন, তবে আনন্দ হওয়াই স্বাভাবিক। কারণ, গবেষণায় দেখা গেছে ডার্ক চকলেট উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ উপকারী। তবে ডার্ক চকোলেটে ৬০% থেকে ৭০% কোকা থাকতে হবে।

ডার্ক চকোলেটের কোকায় থাকে ফ্লাভোনয়েডস্। এই ফ্লাভোনয়েডস্ রক্তবাহের প্রস্থ প্রসারিত বা চওড়া রাখতে সাহায্য করে। তাই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতিদিন এক টুকরো ডার্ক চকোলেট খাওয়া যেতেই পারে। এর ফলে হৃদরোগ হওয়ার সম্ভবনাও কমে যায়। তবে বেশি পরিমাণে ডার্ক চকোলেট খেলে, মিষ্টি বেশি খাওয়ার জন্য হীতে-বিপরীত হওয়ার সম্ভবনা বেশি!

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে রসুন খান

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ সহ রসুনের (Allium sativum) অন্যান্য অনেক উপকারিতার কথা আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বলা আছে। বর্তমান ক্লিনিক্যাল স্টাডিতেও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে রসুনের উপকারিতার কথা স্বীকার করা হয়েছে। তবে গুঁড়ো বা পেস্ট করে রাখা প্যাকেটজাত রসুনের তুলনায় কাঁচা রসুনের উপকারিতা বেশি।

৮৪ জন উচ্চ রক্তচাপযুক্ত মানুষের মধ্যে এক গবেষণায় করে দেখা গেছে, রসুন উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। যাঁরা নিয়মিত রসুন খেয়েছেন, অন্যদের তুলনায় তাঁদের সিস্টোলিক রক্তচাপ 12 mm Hg এবং ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ 6 mm Hg পর্যন্ত কমতে দেখা গেছে।

বেশি ম্যাগনেসিয়াম যুক্ত খাবার খান

রক্তবাহকে রিল্যাক্স রাখতে ম্যাগনেশিয়ামের ভূমিকা আছে। ম্যাগনেশিয়ামের ঘাটতি সচরাচর দেখা না গেলেও, ম্যাগনেশিয়ামের ঘাটতির জন্য উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

তাই উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা এড়াতে ম্যাগনেশিয়ামযুক্ত খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। সবুজ শাকসবজি, দুগ্ধজাত খাদ্য, মাংস, দানাশস্য প্রভৃতি সাধারণ খাদ্যগ্রহণের মাধ্যমেই ম্যাগনেশিয়াম পাওয়া যায়।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করতে শিখুন

উচ্চ রক্তচাপের অন্যতম কারণ হল অত্যাধিক স্ট্রেস বা মানসিক চাপ। তাই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে আপনাকে আপনার স্ট্রেস বা মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতেই হবে।

বর্তমান সময়টাই হল স্ট্রেসফুল সময়। কাজের জায়গা, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক চাহিদা, রাজনীতি-সমাজনীতি-অর্থনীতি প্রভৃতির কারণেই আমরা স্ট্রেস নিই। করোনা-পরবর্তী সময়ে যা আরও বেড়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে মানসিক চাপ বা স্ট্রেস আপনার শরীরে সব সময় যুদ্ধ-যুদ্ধ অনুভূতির সৃষ্টি করে। শারীরিকভাবে হার্ট রেট বেড়ে যায়, রক্তবাহ সঙ্কুচিত হয়ে আসে। তাছাড়া স্ট্রেস আপনাকে অনেক খারাপ অভ্যাসও উপহার দেয়। ঘন ঘন ধূমপান, অতিরিক্ত মদ্যপান করা, অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া ইত্যাদি। অবধারিতভাবে আপনার উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে না। তাই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্ট্রেস অবশ্যই কমাতে হবে। বিভিন্ন পর্যবেক্ষণেও দেখা গেছে, স্ট্রেস কমলে উচ্চ রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে থাকে।

  • স্ট্রেস কমাতে সফ্ট মিউজিক শুনুন। গবেষণায় দেখা গেছে, সফ্ট/সুদিং মিউজিক আমাদের আমাদের স্নায়ুতন্ত্রকে নিরুদ্বেগ করে তোলে। ফলে উচ্চ রক্তচাপ কমে।
  • নিজের শখকে খুঁজে বের করুন। সেই শখের কাজ (যেমন – আঁকা, গান, নাচ, বাদ্যযন্ত্র বাজানো, বাগান পরিচর্যা ইত্যাদি) করলে স্ট্রেস বা মানসিক চাপ কমে। স্বাভাবিক ভাবেই উচ্চ রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • সর্বোপরি স্ট্রেস কমাতে নিজের কাজের লোড কমানোর চেষ্টা করুন। বিশেষত স্ট্রেসফুল কাজগুলি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। বা আগে থাকতেই তার জন্য পরিকল্পনামাফিক প্রস্তুত থাকুন।
  • আপনি যে বিষয়গুলো নিজেই নিয়ন্ত্রণ করিয়ে পারবেন, শুধু সেইগুলিতে ফোকাস করুন। সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা বানান। এতে স্ট্রেস বা মানসিক চাপ কমবে।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে মেডিটেশন ও যোগ ব্যায়াম করুন

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে মেডিটেশন ও যোগ ব্যায়ামের ভূমিকা অনস্বীকার্য। মেডিটেশন বা যোগ ব্যায়াম প্রথমত স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করে। এই স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে থাকার কারণেই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

২০১২ সালে ১৯ হাজারের অধিক মানুষের ওপর পরীক্ষা করে দেখা গেছে মেডিটেশন (বা ধ্যান) উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সমর্থক ভূমিকা রাখে (সূত্র)। মেডিটেশন হল স্থির ও শান্ত হয়ে বসে নিজের শ্বাসবায়ু দীর্ঘক্ষণ ধরে থাকা ও দীর্ঘক্ষণ ধরে ছাড়ার এক পদ্ধতি। মেডিটেশনের কারণে আমাদের প্যারাসিমপ্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র (Parasympathetic nervous system) উদ্দীপ্ত হয়। এর ফলে হার্ট রেট ধীর হয় এবং রক্তচাপ কমে।

যোগা বা যোগ-ব্যায়াম হল শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণে রেখে বিভিন্ন শারীরিক ভঙ্গিমার চর্চা। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে শারীরিক কসরতের সঙ্গে সঙ্গে তাই যোগ ব্যায়াম করার নিদান দেওয়া হয়। ২০১৩ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, নিয়মিত যোগ ব্যায়াম করার ফলে সিস্টোলিক ও ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ উভয়ই প্রায় ৩-৪ mm Hg হ্রাস পায় (সূত্র)।

নির্বিঘ্ন ও গভীর ঘুম নিশ্চিত করতে সচেষ্ট হোন

ঘুমানোর সময় আমাদের রক্তচাপ সাধারণত কমে। অপর্যাপ্ত ঘুম হলে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। ঘুম না হওয়ার কারণে মধ্য বয়স্ক ও পৌঢ়দের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা সৃষ্টি হয়। তাই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নির্বিঘ্ন ও গভীর ঘুম হওয়া দরকার।

গভীর ঘুমের জন্য যথাসম্ভব দুশ্চিন্তামুক্ত হয়ে শুতে যাওয়া উচিত। দিনের বেলা কায়িক শ্রম বা শরীরচর্চা করলে ভালো ঘুম হওয়ার সম্ভবনা বাড়ে। ছয় ঘন্টার কম ঘুম হলে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভবনা বৃদ্ধি পায়।

প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধ নিন

চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রক্তচাপ কত আছে, তা নিয়মিত দেখে নেওয়া জরুরি। জটিলতা সৃষ্টি হওয়ার আগেই ব্যবস্থা নিতে হবে। সমস্যা খুব বেশি না হলে জীবনশৈলী তথা জীবন যাপনের উল্লেখিত পরিবর্তনের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তবে জীবনশৈলীজনিত সমস্যা হলেও কিছু ক্ষেত্রে ওষুধ নেওয়ার প্রয়োজন এড়ানো যায় না। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধ খাওয়া আবশ্যক।


ভালোবাসা ছড়িয়ে দিন

This Post Has 9 Comments

মন্তব্য করুন