আলঝেইমার্স রোগের প্রাথমিক লক্ষণ বা উপসর্গগুলি জানা থাকলে এর চিকিৎসা অনেক আগেই শুরু করা সম্ভব। কারণ এই রোগ কিন্তু একদিনে শরীরে বাসা বাঁধে না। বেশ কিছু দিন, বলা ভালো, বেশ কিছু বছর সময় নেয়। এই রোগের প্রাথমিক অবস্থায় রোগীর স্মৃতিশক্তি, স্বল্পমেয়াদি স্মৃতি লোপ পেতে থাকে। একটু আধটু সমস্যা বুঝে আগে থেকেই ব্যবস্থা নিলে এই রোগ দমন করা খুব একটা কঠিন কাজ নয়।
তাই আলঝেইমার্স রোগের প্রাথমিক লক্ষণ বা উপসর্গগুলি সকলের জানা প্রয়োজন। কেন না প্রিয়জনের প্রয়োজনে আপনিই তাঁর ভরসাস্থল। “প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে ভুলে যাওয়া স্বাভাবিক” বস্তুবাদের ক্ষেত্রে সত্যি হলেও, মানবিকতায় খাটে না। তাই এই সব রোগীদের অসুবিধার কথা মাথায় রেখে প্রতিবছর ২১ সেপ্টেম্বর “ওয়ার্ল্ড আলঝেইমার্স ডে” (World Alzheimer’s Day) হিসাবে পালন করা হয়। কারণ, একমাত্র সচেতনতাই অনেক অপ্রীতিকর সমীকরণ পাল্টাতে সক্ষম। শপথ নিন, যাঁরা ভুলে যান তাঁদের যেন আমরা না ভুলি।
Table of Contents
আলঝেইমার্স রোগের প্রাথমিক কিছু লক্ষণ বা উপসর্গ :
১) স্মৃতি নষ্ট হয়ে যাওয়া
কোনও জিনিস কোথায় রাখলেন তা পরমুহূর্তেই ভুলে যাওয়া। এক কথা বারবার বলা, একই প্রশ্ন বারবার করা। নিজে নিজেই করতে অভ্যস্ত এমন জিনিসও ভুলে যাওয়া। সেই জন্য খাতায় লিখে রাখা বা পরিবারের সদস্যকে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য বারবার বলতে থাকা।
২) সমস্যা সমাধানে সমস্যা হওয়া
আগে যে হিসেবনিকেশ সহজেই করতে পারতেন, তা করতে না পারা। কোথায় কত টাকা খরচ করলেন সব মনে রাখতে না পারা। আগে যেমন পরিবারের সবার ভাল-মন্দ বুঝে সবাইকে বোঝাতেন, তা ঠিকভাবে করতে না পারা।
৩) রোজকার কাজে সমস্যা হওয়া
কোন কাজটা কীভাবে করবেন তা মনে করতে অনেক বেশি সময় লাগা। ঠিক ভাবে পরিকল্পনা করতে না পারা। যেমন, আপেল কাটতে গিয়ে কীভাবে কাটবেন বা কোন সবজির সঙ্গে কোন আনুসঙ্গিক ভাল যাবে, তা মনে করতে না পারা।
৪) সময় এবং জায়গা সম্পর্কে ভুলে যাওয়া
ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্টের ডেট ভুলে যাওয়া। হাঁটতে হাঁটতে বা গাড়ি চালানোর সময় গন্তব্য ভুলে যাওয়া। লিস্ট করে নিয়ে কাজ শুরু করার পর লিস্টটাই ভুলে যাওয়া।
আরও পড়ুন : (১) উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কী করবেন? (২) কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখবেন কী ভাবে? (৩) বিয়ের আগে কোন কোন মেডিকেল টেস্ট করা উচিত? (৪) নাক ডাকার কারণ ও সমাধান (৫) ওজন কমানোর কার্যকরী কিছু উপায়
৫) কথা বলার সময় ভুলে যাওয়া
কথা বলতে গিয়ে উপযুক্ত শব্দ খুঁজে না পাওয়া। কোন কথার উত্তরে কী বলা উচিত তা বুঝতে না পারা। স্বাভাবিক মনে হলেও, একটা বয়সের পর এসবই আলঝেইমার্স রোগের প্রাথমিক লক্ষণ।
৬) জিনিস হারানো
আলঝেইমার্স রোগীদের মধ্যে এই সমস্যা প্রায় কমন। একটা জিনিস এই মুহুর্তে রেখে পরের মুহুর্তে ভুলে গিয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করা।
৭) সাধারন জিনিসে ভুল করা
লেখাপড়ার সময় কোন চিহ্ন কোথায় বসানো উচিত, কতটা দূরে দুটো শব্দের ব্যবধান থাকা দরকার সেসব বুঝতে না পারা। এমন কি, পড়ার বা লেখার সময় রঙের পার্থক্য না করতে পারাও এই রোগের প্রাথমিক উপসর্গ।
৮) বিচারবুদ্ধি কমে যাওয়া
অকারণে টাকা খরচ করা। ভুল পথে রোজগারের চেষ্টা বা নিজের পক্ষে ক্ষতিকর এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া। যা ওই ব্যক্তির স্বাভাবিক স্বভাবের একদম বিপরীত, এমন আচরণ করা।
৯) ব্যক্তিত্বের বদল
ঘন ঘন মুড বদল, হতাশা, মনের মধ্যে অকারণ ভয় ইতাদি দেখা দেওয়া।
১০) নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা
বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় সবার থেকে নিজেকে গুঁটিয়ে নেওয়া। কোনও সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ না নেওয়া। হীনমন্যতায় ভুগতে শুরু করা।
বাবা, মা বা আপনার কোন বয়স্ক প্রিয়জনের যদি উল্লেখিত লক্ষণগুলির এক বা একাধিক দেখা দেয়, তবে সতর্ক হোন। কারণ এটি আলঝেইমার্স রোগের প্রাথমিক পর্যায় হতে পারে। তাই প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা শুরু করুন। সেই সঙ্গে প্রিয়জনের দেখাশোনার জন্য নিজেকে মানসিক ও মানবিক ভাবে প্রস্তুত করুন।
Pingback: খেজুরের উপকারিতা | খেজুর খাওয়ার উপকারিতা